দশ বছর বয়স থেকে নিজ ঘরে নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন সালেহা। সেই নিপীড়ক সৎ বাবার বিরুদ্ধে মামলা করার পাশাপাশি নিজ প্রেমিককে বিয়ে করে জীবন জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। আর এতে পূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে পাশে আছেন তার হবু বর, একসময়ের গৃহশিক্ষক রাশেদ। গত দুইমাস আগে হঠাৎই সালেহা তার দীর্ঘ নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করে নিপীড়কের নামে মামলা করেন।
তার অভিযোগ, ১০ বছর বয়স থেকেই বিকৃত যৌনাচারের শিকার হতে হয়েছে তাকে। তাকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে আসে জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশ। এরপর সালেহাকে যেতে হয় কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। গত সপ্তাহে তাকে সেখান থেকে বের করে এনে আদালতের নির্দেশ ও তাদের ইচ্ছের ভিত্তিতে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রেমিকের সঙ্গে।
কীভাবে সম্ভব হলো— জানতে চাইলে জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশের মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মামলায় আমাদের অনেক ভুগতে হয়েছে এখন পর্যন্ত। ভিকটিমকে কিশোর উন্নয়নকেন্দ্রে পাঠানো হয় বাদী হিসেবে নয়, আসামি হিসেবে। সেটা ছিল ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। পরবর্তীতে এই ঝামেলা আমরা দূর করি।
তিনি আরও জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার ভিক্টিমকে কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ছাড়িয়ে এনেছি আমার নিজের জিম্মাতে’। বিয়ের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তাকে বিয়ে করছেন, তিনি তাকে প্রাইভেট পড়াতেন একসময়। পেশায় ব্যবসায়ী। এবং ভিকটিমের নির্যাতনের সহায়তা চেয়ে তিনিই প্রথম আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এখন সহায়তা দরকার। মেয়েটিকে তিনি বিয়ে করে নিজের কাছে রাখার দায়িত্বটি নিতে চান। তবে বিয়ের আগে পযন্ত আমরা চাই না কোনওভাবে তাদের পরিচয়গুলো প্রকাশ পাক।
বিয়ের সিদ্ধান্ত বিষয়ে ভিকটিম বলেন, স্যারের সাথে সম্পর্কের বিষয়টি মা জানার পর যখনই সৎ বাবার আমার ওপর করা নির্যাতনগুলো জানাতে গেছি, আমাকে বাজে মেয়ে সাব্যস্ত করতে চেয়েছে। এমনকি আদালতেও এ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা পরস্পরকে ভালবাসি এবং আমার এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন, মামলায় সাহস পেয়েছি।
সৎ বাবার বিরুদ্ধে সালেহার মামলা করার ব্যাপারে সহায়তা করায় এই গৃহশিক্ষককে নিয়ে তার মা অনেকরকম গল্প সাজানোর চেষ্টা করেছেন বলে বাদি জানায়। যদিও সালেহাকে নরকযন্ত্রনা থেকে বের করে আনাই তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বলেও জানা যায়।
ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের যে সামাজিক ব্যবস্থা— এর বাইরে নতুন উদাহরণ তৈরি হতে যাচ্ছে, বিষয়টি উল্লেখ করে নারী প্রগতি সংঘের প্রধান রোকেয়া কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে সামাজিক সমঝোতা করা হয় যা মেয়েটির জন্য অপমানজনক। এক্ষেত্রে যেটি ঘটছে সেটি অনন্য উদাহরণ। মেয়েটি যাকে পছন্দ করে এবং প্রতিবাদ জানাতে যে সহায়তা করেছে তাদের মধ্যে বিয়ে হলে এটা সম্মানের। আমাদের উচিত মেয়েটির সাহস জোগানো।
সালেহার জীবনে কৈশোর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সে গর্ভবতী হয়। গত আট বছরে আরও নানা ঘটনা ঘটেছে তার জীবনে। এখন সে তার ওপর নিপীড়নকারীর উপযুক্ত শাস্তি চায়।
এখন আসামি গ্রেফতার না হওয়া বিষয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। দ্রুতই ধরতে পারব বলে আশা করছি। তার মা বা অন্য কারও সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদেরও পরবর্তীতে আসামি করা হবে।
/টিএন/এইচকে/আপ-এমপি/