X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বকেয়া ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ মে ২০২৪, ১৯:৫৭আপডেট : ০৭ মে ২০২৪, ২০:০৮

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো বা পিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ সঞ্চালন কোম্পানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর ৩৩ হাজার ১০৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

মঙ্গলবার (৭ মে) জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর বিউবোর কাছে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ ১০ হাজার ৩৯১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলোর একই সময়ের পাওনা ১৫ হাজার ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এছাড়া যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর পাওনা ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদানিসহ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির পাওনা ৫ হাজার ২৯৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

স্বতন্ত্র সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়েও স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা বেশি। জানুয়ারি ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এ বছর ৩০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতায় ঘাটতি না থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের কারণে পরিপূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে কিছু কিছু স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া অত্যধিক গরম ও দেশের কোথাও কোথাও দাবদাহ থাকার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন বৃদ্ধির উপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি, অচিরেই সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আহমদ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গভীর সমুদ্রে খনিজ সম্পদ আহরণে নিলাম আবেদনে গেছি। ইতোমধ্যে আমরা টেন্ডারে গিয়েছি। এক্সন মবিল, শেভরনসহ ১৭টি কোম্পানি আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা টু-ডি জরিপের ফলাফল নিয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) তাদের সঙ্গে প্রি-বিড মিটিং আছে। বিডিং প্রসেস আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোম্পানি নিয়োগ করতে পারবেন বলে প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

সংরক্ষিত আসনের ফরিদা ইয়াসমিন তার প্রশ্নে শিল্প প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ার অভিযোগ শিল্প মালিকেরা করছেন বলে জানান। একই সঙ্গে তিনি বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সরবরাহ অপ্রতুল বলে জানান। প্রশ্নের জবাবে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের দেশে দৈনিক উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ১৭’শ ঘনফুট। আমদানি করি ১১’শ ঘনফুট গ্যাস। প্রায় ৩ হাজার ঘনফুট গ্যাস লাইনে দিতে পারছি। প্রয়োজন ৩৪০০-৩৫০০ ঘনফুট। এখানে ঘাটতি ৫’শ ঘনফুট।

কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস পাচ্ছে না প্রতিমন্ত্রী তা লিখিতভাবে জানাতে অনুরোধ করে বলেন, কোন কোম্পানি গ্যাস পায় না এমন লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস রাখার জন্য। বাসা-বাড়িতে গ্যাসের সমস্যা আছে। চাপের সমস্যা আছে। সে কারণে আমরা বিকল্প এলপিজি ব্যবহারের কথা বলছি। আমরা বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছি না বা দেবো না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো পাইপলাইনের গ্যাস শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করবো। এলপিজি বাসা-বাড়ি, গাড়িতে ব্যবহারে পরিকল্পনা ভবিষ্যতে আমাদের রয়েছে।

বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থাকলেও বৃহত্তর ময়মনসিংহে সমস্যা হচ্ছে। কারণ সেখানে গ্যাসের স্বল্পতা। জামালপুরের দুটো বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বন্ধ আছে। একটি টাকার কারণে এলসি খোলা যাচ্ছে না। আরেকটি অন্য কারণে বন্ধ আছে বলে জানান তিনি।

২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুতের লোকসান ৫২৪ কোটি

২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন ৮০‍টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকসান ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ১৩ হাজার ২৯ টাকা বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

ফেনী-২ আসনের সরকার দলীয় এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় হয়েছিল ৩১ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩১ হাজার ৭৭১ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার ৪৪৭ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মুনাফার হয়েছিল ৫০ কেটি ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা। এই সময়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৬৬৫ কোটি ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৯ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের লোকসানের মূল কারণ হিসাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, খুচরা মূল্যহার পাইকারি মূল্যহারের চেয়ে কম হওয়া। ভবিষ্যতে মূল্য সমন্বয় হলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলো লোকসান থেকে মুক্ত হবে।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে ১১ হাজার ৮৮০ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল থেকে ৬ হাজার ৩৫ মেগাওয়াট, ডিজেল থেকে ৬২৬ মেগাওয়াট, কয়লা থেকে ৫ হাজার ১০৮ মেগাওয়াট, হাইড্রো থেকে ২৩০ মেগাওয়াট এবং সৌর ও বায়ু থেকে ১ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে।

সরকার দলীয় এমপি আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৯টি অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৬টি কূপ খননের পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকার দলীয় এমপি হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে কয়লাভিত্তিক ৪ হাজার ৮৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বর্তমানে চালু আছে। প্রতিবেশী ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। ৩ হাজার ৭০১ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।

স্বতন্ত্র এমপি আবদুল কাদের আজাদের প্রশ্নের উত্তরে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) অধীনে চালু ৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪টি লোকসানি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হলো এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড, ইস্টার্ন টিউসব লিমিটেড ও ন্যাশনাল টিউসব লিমিটেড। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫টি লোকসানি পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের পর থেকে সরকার এ খাতে কোনও ভর্তুকি দিচ্ছে না বলেও জানান।

২০২২-২৩ অর্থবছরের হিসাব বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) ৯টি লোকসানি প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউরিয়া সার কারখানাগুলোর প্রধান কাঁচামাল প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় কারখানাগুলো লোকসানে আছে। বিসিআইসি কর্তৃক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান টিএসপিসিএল ও ডিএপিএফসিএল ভর্তুকির আওতায় পরিচালিত। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য ভর্তুকি পাওয়া যায় না। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠান দুটোর জন্য ১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ভর্তুকি পেয়েছে।

/ইএইচএস/এমএস/
সম্পর্কিত
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প ও সহজ উৎস খুঁজতে হবে: নসরুল হামিদ
বিনিময়ের মাধ্যমে বাঙালি সংস্কৃতি আরও ঋদ্ধ হবে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বাড়ানোর রোডম্যাপ হচ্ছে: বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
কারখানার ছাদ থেকে পড়ে নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
কারখানার ছাদ থেকে পড়ে নারী পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর অভিযোগ
কী থাকছে হিমায়িত মাংস আমদানি নীতিমালায়
কী থাকছে হিমায়িত মাংস আমদানি নীতিমালায়
‘নিখোঁজ’ এমপি আনোয়ারুলের সর্বশেষ অবস্থান ভারতের মুজাফফরাবাদ: ডিবি
‘নিখোঁজ’ এমপি আনোয়ারুলের সর্বশেষ অবস্থান ভারতের মুজাফফরাবাদ: ডিবি
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বন্ধ রুশ তেল শোধনাগার
রাশিয়ায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বন্ধ রুশ তেল শোধনাগার
সর্বাধিক পঠিত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ