যেকোনও ‘রিচ ফুড’ বা মসলাযুক্ত খাবার, কিংবা নিয়মিত আড্ডায় হজমের উপকারী হিসেবে কোমল পানীয় অনেকেরই পছন্দের। কিন্তু না জেনে কোমল পানীয় পান করে আমরা নিজেদের কতো বড় সর্বনাশ করছি, সে হিসাব কজনই বা রাখেন। কোমল পানীয় মোটেই উপকারী কোনও খাবার নয়, বরং কোমল পানীয়ের কারণে বিবিধ অসুখের সূত্রপাত হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন, একটি ৫০০ গ্রামের কোমল পানীয়ের বোতলে ১৭০ ক্যালরি সোডা ও ১৫ চামচ চিনি ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, হার্ট অ্যাটাক, দাঁতের ক্ষয় এবং বন্ধ্যাত্বের মতো রোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়। কেবল তাই নয়, লিভার সিরোসিস, হাঁপানিসহ ফুসফুসের নানা জটিল রোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া, পাকস্থলীতে ক্যান্সারসহ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকগুণ বেড়ে যায় কোমল পানীয় গ্রহণের ফলে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোমল পানীয় খেলে সাময়িক তৃষ্ণা মেটে, সাময়িক শান্তি হয়তো হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বিবেচনায় এর প্রতিক্রিয়া সাংঘাতিক। কোনওভাবেই এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত রিফাইন সুগার মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রচলিত রয়েছে কোমল পানীয় হজমে সাহায্য করে। কিন্তু মানব শরীর সাধারণত ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার হজম করে থাকে। অথচ কোমল পানীয় গ্রহণ করার সময় এর তাপমাত্রা থাকে ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর খাবারের পরপরই যখন একেবারে ফ্রিজ থেকে বের করা কোমল পানীয় পান করা হয়, তখন হজমে সাহায্য তো দূরে থাক, সেটি ভেতরে পচন ধরায়।’ ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের মতে, যাদের হার্টে সমস্যা, কোলেস্টরেল বেশি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, ওজন বেশি তাদের কোনওভাবেই কোমল পানীয় খাওয়া যাবে না।
অপরদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ টেনে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোতে মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এই কোমল পানীয়। আর এই অতিরিক্ত ওজন মানবদেহের সব রোগের অন্যতম উৎস।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোমল পানীয় যেন বরফের মতো জমাট না বাঁধে, সেজন্য এতে ইথিলিন গ্লাইকোল নামের এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর।’ ইথিলিনকে বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘যারা অধিকমাত্রায় এই জাতীয় পানীয় খেয়ে থাকেন, তাদের কিডনিতে পাথর জমা হওয়ার হার প্রায় তিনগুন বেশি। আবার এসব পানীয়তে যে স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়, তা মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। তাই কোনওভাবেই কোমল পানীয় কোনও কোমল বিষয় নয়, প্রতিটি সচেতন মানুষের উচিৎ, যেকোনও কোমল পানীয় পরিহার করা। কোমল পানীয় পান আর জেনে বুঝে বিষ পান করা একই বিষয়।’
/জেএ/এসএ/