পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশের দু’মাস পর ‘‘চুপিসারে’ সেই ফলাফল পাল্টে ফেলেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এতে করে রাতারাতি পাল্টে যেতে বসেছে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভাগ্য। কোনও শিক্ষার্থীর জিপিএ প্রথমে যা ছিল, তার চেয়ে এবারে কমে গেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা স্বীকারও করেছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আচরণে হতবাক হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ঢাকা কলেজের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করে। ওই ফলাফলে ৩১৮ টি কলেজের ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৫ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯৯ হাজার ৫৭০ জন উত্তীর্ণ হন।
কিন্তু প্রথম প্রকাশ হওয়া এই ফলাফলে কোনও ত্রুটি রয়েছে, এমন কোনও স্বীকারোক্তি বা নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ গত ২১ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পূর্বের ফল সরিয়ে, নতুন ফল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন ফল প্রকাশ করা হচ্ছে এমন কোনও নোটিশও দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে রাজধানীর ঢাকা কলেজের কয়েক’শ শিক্ষার্থী গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার কলেজের শহীদ মিনারের সামনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। আজ (রবিবার) রাজধানীর তিতুমীর কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা আবারও মানববন্ধন করবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।।
ঢাকা কলেজের মানবন্ধনের সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কি রসিকতা শুরু করেছে? যখন যা মনে হচ্ছে সেটাই করছে। ফলাফলে কোনও ত্রুটি রয়েছে এবং আবার তা সংশোধন করতে হবে, এমন কোনও নোটিশ দেয়নি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ওয়েবসাইট থেকে প্রথমবারের ফল সরিয়ে ফেলে, নতুন করে ফল বসিয়ে দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে বড় ধরনের কারচুপি করা হয়েছে।’
সোহেল নামে অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রথম রেজাল্ট উল্লেখ করে বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করেছি। কিন্তু এখন যদি ফলাফলের তারতম্য হয়, তাহলে আমরা চাকরির বিপরীতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলেও নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘ভুয়া’ বলে প্রমাণিত হবো। ফলে আমাদের দাবি, আমাদের পূর্বের ফলই বহাল রাখতে হবে।’
ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী বলেন, ‘আমরা তো প্রথমে জানতেই পারিনি যে, আমাদের রেজাল্ট পরিবর্তন করা হয়েছে। রেজাল্ট পরিবর্তনের দুদিন পর বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনে রেজাল্ট চেক করে দেখি, আমার রেজাল্ট আগেরটা নেই। আগের চেয়েপাঁচ পয়েন্ট কমে গেছে। এতে আমার জিপিএ ‘এ-’ থেকে নেমে ‘বি’ তে চলে এসেছে।’ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাতের আঁধারে চোরের মতো কাজটি কিভাবে করলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের এই ফলাফল নিয়ে অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশের পর যারা মাত্র একটি সাবজেক্টে ফেল করেছিলেন, তাদের সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এটা কিভাবে করলে, জানতে চাইলে তারা বলেন, ফল প্রকাশের পর যারা এক সাবজেক্টে ফেল করেছিলেন, তারা মহাখালীতে উপাচার্যের গাড়ি আটকে দিয়েছিলেন। তখন উপাচার্য তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তাদেরকে পাশ করিয়ে দেবেন। পরে পুনর্নীরিক্ষণ ফলাফলে সবাইকে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয়বার ফল প্রকাশের তিন দিন পর গত ২৪ নভেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ওয়েবসাইটে দেওয়া এক নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর চতুর্থ বর্ষের প্রকাশিত ফলে আংশিক সংশোধন করা হলো। কেন দু’মাস পর পুনরায় সংশোধন করে ফল প্রকাশ করা হলো এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনও রকম ভুল স্বীকার না করে বরং নোটিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত ফলাফল সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেন মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী অনেকেই অামার কাছে অভিযোগ করেছেন তাদের ফলাফল পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কী কারণে এমন করলেন তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালো বলতে পারবে। এর চেয়ে বেশি কিছু অামার জানা নেই। ফলে, এ ব্যাপারে অামার মন্তব্য করাও ঠিক না।’
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান শনিবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমবারে ফলে কিছু সমস্যা ছিল। সেটাই সংশোধন করে পুনরায় তা প্রকাশ করা হয়েছে। ’
কী সমস্যা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম বর্ষের দিকে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ফেল করেছিল, আবার কেউ মানোন্নয়ন পরীক্ষায় বসেছিল। ওই সমস্ত ফলাফল সংযোজন বিয়োজন না করেই আমরা ফলাফল প্রকাশ করেছিলাম। ফলে পরবর্তীতে যখন আমরা সেটা ধরতে পেরেছি, তখনই তা সংশোধন করে ফল প্রকাশ করেছি।’
কিন্তু দ্বিতীয়বার ফল প্রকাশের আগে কোনও নোটিশ না দিয়ে, রাতারাতি ফল পরিবর্তন করা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফলাফল সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজনের ক্ষমতা সবসময়ই রাখি। ফল প্রকাশের সময় নোটিশে এই কথাটি উল্লেখও থাকে। ’
যারা ইতোমধ্যে মাস্টার্সে ভর্তির জন্য আগের রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন, তাদের ভর্তি কিভাবে নিশ্চিত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু রেজাল্ট আমাদের হাতেই রয়েছে। ফলে যে শিক্ষার্থী যে ফল উল্লেখ করে আবেদন করুক না কেন, আমরা তা সংশোধন করে নেবো। এতে কোনও সমস্যা হবে না।’
তবে আপনারা ফল প্রকাশের আগে কেন আরও সতর্ক হলেন না জানতে চাইলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি, এটা আমাদের ভুল হয়েছে। আমাদের আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’ তবে কতজন শিক্ষার্থীর ফলাফলে তারতম্য হয়েছে, তার কোনও সঠিক তথ্য তিনি জানাতে পারনে নি।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
/আরএআর/এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
- রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চায় বাংলাদেশ
- বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন কাস্ত্রো: ড. কামাল
- এমপি-ইউএনও’র বিরুদ্ধে সাঁওতালদের মামলা