তিনি বলেই চলেন,কিভাবে আগুনে নিজের ঘর পুড়তে দেখেছেন, কিন্তু কিছুই করতে পারেননি। মাসের শুরুর বেতনটাও ঘরেই পুড়ে গেছে। নিজের ঘর নেই, এখনও পোড়া টিনের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি উল্টো আমাকেই বলেন, ‘কিসু মনে নিয়েন নারে মা, পানি খাও।’
বাড়ি কই রংপুর কিনা, জিজ্ঞেস করে হ্যা সূচক শব্দ শুনতে শুনতে তাকে নিয়েই সামনে এগোই। যারা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় রাতে যেতে পারেননি, তারা ছোট ছোট দলে তখনও আধাশোয়া। পাশে কেউ কেউ বসে ভাবছেন, এরপর কী করবেন।
মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করি, ‘এটা আসলটা?’ তিনি বলেন, ‘হ। আসল হইলো, কারোর কারোর লাভ। আমাদের দেখায়ে লাভ, আমাদের পুড়ায়ে লাভ। বস্তি ঘরতো বড়লোকেরা আবারও তুলবো। কিন্তু আমার বালিশ-কাঁথা-কম্বল? আইবো না।’
সকাল থেকে টেলিভিশন চ্যানেল, সাহায্যকারীদল হিসেবে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া ছেলেদের ভিড় তখন বাড়তে শুরু করেছে।কারোর সঙ্গে একা কথা বলার উপায় নাই।একদিকে সরে গিয়ে দেখা যায়,কয়েকজন কিশোর পুড়ে যাওয়া জঞ্জাল উল্টে-পাল্টে দেখছে, যদি কিছু মেলে।
নিজেই ঘরের আশপাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে রাহেলা বেওয়া বলেন, ‘কতবার আগুন ধরলো,প্রতিবারই পুরানরা অনেকে চলে যায়, নতুন নতুন মানুষও আসে। এমন ক্যারে।’
‘বছর খানেক আগে ধরবাইর পর (নয় মাস আগে) এমনই হসিল। আইসা কয় আগুন নাকি নিভসে। বুকের আগুন নেভে নাই। ডাকেন ফায়ার ব্রিগেডকে, নেভাক আগুন। দুই-দুইবার এই জায়গায় আমার যাকিছু ছিল সব আগুনের মুখে পড়লো। কথাগুলো বলছিলেন নিকেতনে কাজ করেন এমন এক নারী, যিনি আগেও একবার নিঃস্ব হয়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন।
সুমাইয়া নামে ১৩ বছরের এক মেয়ে টিনের নীচে হাত দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখনও গরম। পুড়ে যাবেতো বলতেই সে বলে, ‘আমার স্কুলের বেতন ছিল। এক টুকরা পাইসি। দেখেন, ছিল ।’ তার পাশেরই তার বন্ধু প্রায় পুরোটা পুড়ে যাওয়া একশ টাকার একটা নোট বের করে এনে, চোখে পানি ধরে রাখতে পারে না।
মধ্যবয়সী এক নারী বললেন, আপনারা আসবেন, আপনাদের কাজ। কিন্তু কিসু জিগায়েন না। এখান থেকে আমাদের ওঠাবে না জানি। কিন্তু বারবার আগুন লাগায়ে হিংসাহিংসি করে ক্ষমতাবানরা। আমরা অক্ষম।কিন্তু কান্দনের ছবি তুইলেন না। পরে একসময় আইসেন। আল্লাহ দিলে দেখা হবে এখানেই।
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
আরও ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করলেই শেষ হবে গুলশান হামলা মামলার তদন্ত