একদিন গণআদালতে বিচার হবে খালেদার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা করে, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায় তাদের মুখে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের সুরক্ষার কথা মানায় না।’ তিনি বলেন, ‘যারা জঙ্গি-সন্ত্রাসী বাংলার মানুষ একদিন তাদের বিচার করবে। একদিন গণআদালতে তাদের বিচার হবে।’

১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু’র স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি এতিমের টাকা চুরি করেন। মামলায় আদালতে হাজিরা না দিয়ে পালিয়ে বেড়ান। তার মুখ থেকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভাষা শিখতে হবে? বাংলার মানুষ তা মেনে নেবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় দাঁড়িয়ে  বঙ্গবন্ধু বাঙালি ও বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্যে যে রূপরেখা দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসের স্থান বাংলাদেশে হবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ধর্মের নামে যারা আত্মঘাতী হচ্ছে ও আত্মহত্যা করছে, তারা কখনও বেহেস্তে যাবে না। তারা দোযখে যাবে। ইসলাম সৌহার্দ্যের ধর্ম। ’   

 বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সরকার বাস্তবায়ন করে চলেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল এ দেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে না। প্রত্যেকের আশ্রয়-চিকিৎসা-শিক্ষা নিশ্চিত হবে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এসব আওয়ামী লীগ সরকার পূরণ করে চলেছে।’

 সরকার প্রধান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল ইয়াহিয়া, কিন্তু এ দেশের মানুষের বীরত্ব আর আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল।’

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরপর হত্যা, ক্যু’র রাজনীতি শুরু হলো। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অসাংবিধানিক শাসন কায়েম করে ষড়যন্ত্রকারীরা। যে পাকিস্তানিরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের কিছু কুলাঙ্গার তাদের পথ দেখিয়ে নিয়েছিল। সেই যুদ্ধাপরাধীরা অনেকে কারাগারে ছিল, জিয়াউর রহমান তাদের মুক্ত করে দিলো।’ শেখ হাসিনা বলেন,‘যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, জাতিসংঘে গিয়েছিল জনমত গড়ে তুলতে, তাদের ক্ষমতায় বসেছিল। তাদের গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দিয়েছিল। ’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার আমলে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। কারফিউ দিয়ে দেশ চালান তিনি। মানুষের স্বাধীনতা ছিল না। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। তারা একদিকে হত্যা করে, আরেক দিকে আওয়ামী লীগের লোকজনকে ধরে নিয়ে যায়। ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে পেটোয়াবাহিনী বানিয়ে নিজের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করে।’ 

পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় গিয়েছে তারা ভোগের রাজনীতি করেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘তারা ক্ষমতায় গিয়ে অর্থবিত্ত গড়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু কী স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন। এদেশ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলবে। পঁচাত্তরের পর জাতিকে মাথা উঁচু করে থাকতে দেয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। কারণ তাদের আত্মা ছিল পাকিস্তানের কাছে ।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘জাতির পিতা বেঁচে থাকলে ২৫-৩০ বছর আগে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো। বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াত।’

বাংলাদেশের মানুষ কোনও অন্যায় মেনে নেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর জনগণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসায়। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। আজ কেউ ক্ষুধার জ্বালায় আর্তচিৎকার করে না। আজ হতদরিদ্ররা বিনা পয়সায় খাবার পায়। ঘর পাচ্ছে। আগামী দিনে প্রত্যেককে ঘর করে দেওয়া হবে। মানুষ আজ চিকিৎসা পায়। মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিয়েছি। সবার শিক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

 ইএইচএস/পিএইচসি/ এপিএইচ/

আরও ড়ুন:  ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ২৫ বছর আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতো’