বাংলাদেশের হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান আরএসএস প্রধানের

আরএসএস প্রধান মোহনরাও মধুকর ভাগবতভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রধান মোহনরাও মধুকর ভাগবত বলেছেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা নিজেদের দোষেই আক্রান্ত হচ্ছেন। দুর্দশার জন্য তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে দায়ী করতে পারেন না। গতকাল শনিবার কলকাতায় এক জনসভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

আরএসএস যে কোনও সম্প্রদায়ের বিরোধিতা না করে শুধু হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত, সেই দাবিও করেন সঙ্ঘপ্রধান।

বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রসঙ্গে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুরা কেন নির্যাতিত, সেটা ভেবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেখানে অমন অবস্থার জন্য হিন্দুরা নিজেরাই দায়ী। হিন্দুদের সে দেশে আক্রমণ বা নির্যাতনের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারণ তারা শক্তিশালী নন, ঐক্যবদ্ধ নন।’

গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষিতেই সম্ভবত এমন মন্তব্য করেন আরএসএস প্রধান ভাগবত। যদিও তিনি নির্দিষ্টভাবে কোনও হামলার কথা উল্লেখ করেনি। অবশ্য বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে ভারতে এতদিন নানা ব্যাখ্যা শোনা গেলেও তার এই বক্তব্যকে অভিনবই বলতে হবে।

আরএসএস যে কোনও সম্প্রদায়ের বিরোধিতা না করে শুধু হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত, সেই দাবিও করেন সঙ্ঘপ্রধান।

ভারতে বিজেপি সরকারের ঘোষিত নীতি, প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে ভারতে এলে তারা আশ্রয় পাবেন বা শরণার্থীর মর্যাদা পাবেন। এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব বা অন্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। তবে এমন ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের ভারতে চলে আসার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে কিনা, এমন অভিযোগও উঠছে।

এমন পটভূমিতে আরএসএস প্রধানের মন্তব্য অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুরা দলে দলে ভারতে চলে না এসে বরং দেশে থেকেই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুক, সম্ভবত এমনটাই তারা চাচ্ছেন। আরএসএসের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা কেন চলে আসবেন? সে দেশের জমিতে তাদের অধিকার কারও চেয়ে কম নয়। তা বজায় রাখতে শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও প্রয়োজনে লড়তে হবে।’

বাংলাদেশের হিন্দুদের একজোট হওয়ার আহ্বান জানাতে আরএসএস প্রধানের কলকাতাকে বেছে নেওয়ার পেছনেও তাৎপর্য আছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ইসলাম-তোষণের রাজনীতি করছে এবং হিন্দুদের নিজস্ব ধর্মীয় আচার-আচরণ করতে দিচ্ছে না, এই অভিযোগ নিয়ে মাস কয়েক আগেই আরএসএস রাজ্যপালের শরণাপন্ন হয়েছিল।

এমনকি শনিবারের সমাবেশ করার জন্যও আরএসএস প্রথমে রাজ্য সরকারের অনুমতি পায়নি। পরে হাইকোর্ট শহরের পুলিশ প্রধানের কৈফিয়ত তলব করার পর তারা সমাবেশের অনুমতি পায় এবং হিন্দুদের একজোট করার ডাক দিতে মোহন ভাগবত সেই সভামঞ্চকেই বেছে নেন।

আরএসএস-কে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আদর্শগত অভিভাবক ধরা হলেও সংগঠনটির দাবি, তারা সরকারের দৈনন্দিন কাজ বা রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী নয়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ভারতে হিন্দু সমাজের উন্নয়ন ও বিকাশ।

এ প্রসঙ্গে আরএসএস প্রধান বলেন, ‘কারও বিরোধিতা করার জন্য আমাদের এই সংগঠনের জন্ম হয়নি। আমরা শুধু নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতেই এই সঙ্ঘকে গড়ে তুলেছি।’ সমাবেশে তার প্রশ্ন, ‘এই দেশে হিন্দু সমাজের এক মহান ইতিহাস আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অবস্থা কি আগের মতো আছে? তারা কি নিজেদের ধর্মীয় আচার-আচরণ স্বাধীনভাবে পালন করতে পারছেন? তাদের মানবাধিকার কি সুরক্ষিত?’

/এএআর/ আপ-এমডিপি/