মেয়েটি জানে না, ছেলেটি নেই

ফারজাত

ওরা একসঙ্গে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখতো, মিছিলে যেত, একসঙ্গে পাহাড় ডিঙ্গাতো। সব কিছু ঠিকই ছিল, অথচ একটি সড়ক দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিল। এখন একজন চলে গেছে না ফেরার দেশে, আরেকজন পরে আছে হাসপাতালের বিছানায়। শম্পা (ছদ্মনাম) জানেও না, তার হাত ধরে পথ চলার শপথ করেছিল যে ছেলেটি সেই ফারজান তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে, কোনোদিন ফিরে আসবে না আর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কথাগুলো বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের আরেক বন্ধু আয়েশা (ছদ্মনাম) ।

প্রসঙ্গত, গত ১১ জানুয়ারি রাতে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে হানিফ পরিবহনের বাসটি কুমিল্লায় সড়ক দুর্ঘটনায় পরলে গুরুতর আহত হন ফারজাত ও শম্পা। মাথায় আঘাত পাওয়া ফারজাতকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৪ জানুয়ারি চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে, গুরুতর আহত হয়ে শম্পাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন ঢাকার একটি হাসপাতালে, তাকে চিকিৎসকরা আশঙ্কামুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন।

আজ ১৬ জানুয়ারি কথা হয় শম্পার সঙ্গে। বাম হাত পুরোটাই প্লাস্টারে মোড়ানো, কোমর ভেঙেছে, পায়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন ব্যথায়।  

ফারজাতুল ইসলাম

চিকিৎসাধীন শম্পার অপারেশন হবে জানিয়ে আয়েশা বলেন, ‘ওর অবস্থা আরেকটু ভালো হলেই চিকিৎসকরা অপারেশন করবেন। শারীরিকভাবে এখনও অপারেশনের জন্য সে ফিট নয়। ’ তিনি বলেন, ‘ফারজাতের মৃত্যুর খবর শম্পাকে জানানো হয়নি। সে সহ্য করতে পারবে না, চিকিৎসকদেরও বারণ রয়েছে সে যেন উত্তেজিত না হয়।’

হাত-কোমর ভাঙা অবস্থায় হাসপাতালে শুয়ে আছে শম্পা, ফারজাতের বন্ধু। শম্পা জানে না, আর কোনোদিন দেখা হবে না ওদের। একসঙ্গে আর ট্রেকিং করা হবে না।  তিনদিন আগে রাত তিনটার সময় বেপরোয়া বাসটি এলোমেলো করে দিয়ে গেছে সব।
শম্পা ও ফারজাতের আরেক বন্ধু নিতু (ছদ্মনাম)। শম্পার এমন অবস্থায় উপায় না দেখে অন্য বন্ধু  ও স্বজনদের ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সাবধান করে দিয়েছেন । নিতু তার ওয়ালে সবার উদ্দেশে লিখেছেন, ‘শম্পা যখনই জেগে থাকছে তখন মোবাইল চাইছে। ফেসবুক দেখতে চাইছে। ফারজাতের খবর জানতে চাইছে। কিন্তু কোনোভাবেই ফারজাতের কথা তাকে জানানো যাবে না। অনেক অনেক লেখা, কয়টা ডিলিট করা যাবে! লেখা ডিলিট করা সমাধান না। যারা ওকে দেখতে যাবেন, তারা ওর সামনে মোবাইল ইউজ করবেন না। মোবাইল সাইলেন্ট রাখবেন। ও মোবাইল চাইলে বলবেন, মোবাইল ক্ষতিকর হওয়ায় ডাক্তার ওকে মোবাইল দিতে বারণ করেছেন, ফারজাতের চিকিৎসা চলছে। এই কথাগুলো ঠিক করে বলতে পারলেই হবে। সবচেয়ে ভালো হয় ডাক্তারকে দিয়ে বলাতে পারলে। প্লিজ কেউ অস্থির হবেন না। অস্থির করবেন না কাউকে।’

/টিএন/

আরও পড়ুন: নূর হোসেন ও র‌্যাবের কমান্ডার তারেক সাঈদসহ ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড