অভিযোগের যত সেল পুলিশে

পুলিশকয়েক বছর আগে ‘বন্ধু পুলিশ’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুলিশকে আরও বেশি গণমুখী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর সাধারণ মানুষকে সেবা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতরে বেশ ক’টি সেল খোলা হয়। এসব সেলের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগ করতে পারবেন এবং সাধারণ মানুষের পুলিশি সেবা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব সেল থেকে যথাযথ সেবা পাওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাবে পুলিশ কিংবা অপরাধীদের হাতে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার অনেক ভুক্তভোগী এসব সেলের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারপরও প্রতিদিন দু’শতাধিক অভিযোগ ও বিভিন্ন বিষয়ে সেবা নেওয়ার আবেদন পেয়ে থাকে পুলিশ সদর দফতর।

পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, এক্ষেত্রে বেশিরভাগ আবেদনেরই সুরাহা  হয়ে থাকে। পুলিশের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ অপরাধের ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সিটিজেনস হেলপ রিকোয়েস্ট (সিএইচআর) বা ‘ও পুলিশ, বন্ধু আমার (বন্ধু পুলিশ)’ প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণকে সেবা দেওয়ার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০০৯ সালে। পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে এ প্রকল্পটি হাতে নেয় পুলিশ সদর দফতর। কম জরুরি বা তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এমন সব বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি বা আইনি সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে গঠিত সেলের মাধ্যমে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যেও পুলিশ সদর দফতরে প্রবাসী সহায়তা সেল খোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরাও প্রয়োজনীয় পুলিশি সেবা নিয়ে থাকেন।

পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের চেক বই, সার্টিফিকেট বা অন্য যেকোনও গুরুত্বপূর্ণ দলিল হারিয়ে গেলে বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে সেবা নিতে পারেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া ছিনতাই, বখাটে, মাদকসেবী বা অপরাধীদের আড্ডাস্থল বা অন্য কোনও অবৈধ সমাবেশ সম্পর্কে তথ্য দিতে চাইলে ওইসব সেলে দিতে পারবেন। তবে পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া পেতে হলে মোবাইল বা অন্য কোনও মাধ্যমে থানার ওসি কিংবা ডিউটি অফিসারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে হবে। নতুন বা পুরনো ভাড়াটিয়া সম্পর্কেও তথ্য দেওয়া যাবে।পুলিশ সদর দফতর

সিকিউরিটি সেলের মাধ্যমে আইজিপি বরাবরে জানানো যাবে যেকোনও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো। তাছাড়া পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন বিভাগের আওতায় রয়েছে পুলিশের কাছ থেকে সেবা নেওয়ার বেশ কিছু সেল। এই সেলগুলো হচ্ছে স্পেশাল ক্রাইম সেল, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সেল, মানবপাচার দমন মনিটরিং সেল, অ্যাসিড অপরাধ দমন সেল, প্রবাসী সহায়তা সেল, সমন ও ওয়ারেন্ট সেল, জঙ্গি, সন্ত্রাসী এবং স্পর্শকাতর মামলা মনিটরিং সেল, মাদক মামলা সহায়তা সেল এবং প্রসিকিউশন সেল। বিভিন্ন ধরনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা এসব সেলে অভিযোগ জানিয়ে কিংবা অগ্রগতি ও স্থবিরতার তথ্য দিয়ে মামলার কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিতে পারেন। 

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, সকল মামলা মনিটরিং করা হলেও সারাদেশে জঙ্গি তৎপরতাসহ স্পর্শকাতর যেসব মামলা হয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো মনিটর করা হয়। তবে কেউ যদি তার মামলার তদন্ত, তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্ত তদারক কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেন, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

মানুষকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত সেলগুলো থেকে সাধারণ মানুষ সুবিধা পাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. এ. এস. এম. মাসুম রব্বানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব সেল গঠিত হওয়ার পর আমরা প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক আবেদন কিংবা অভিযোগ আমরা পেয়ে থাকি। পরে সেগুলোর ধরণ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

মাসুম রব্বানী বলেন, ‘যেগুলো সাধারণ কোনও ঘটনা নয়, যেসব অপরাধের কারণে সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ওইসব চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হয়ে থাকে।’ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাজ হচ্ছে মানুষকে সহায়তা দেওয়া ও নিরাপদ রাখা। সাধারণ মানুষকে পুলিশ ও অপরাধীদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্যই আমরা কাজ করি। মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্যই ‘স্পেশাল ক্রাইম অ্যান্ড প্রসিকিউশন’ নামে সদর দফতরে একটি বিভাগ করা হয়েছে।’’

/জেইউ/ এপিএইচ/

আরও পড়ুন- 

নূর হোসেনকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন যারা

বোনের বাড়িতে রসরাজ, কাটছে না নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা