বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘ত্বকী হত্যা ও বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের বৈষম্য’ শীষর্ক গোল টেবিল বৈঠকে কামাল লোহানী এ কথা বলেন। ত্বকী হত্যার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ এই বৈঠকের আয়োজন করে।
গোল টেবিল আলোচনায় বক্তারা অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিলে ত্বকী হত্যার তদন্ত থেমে যায়। ত্বকী হত্যার বিচার না করে ওসমান পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় এই পরিবারের অপকর্মের দায়ভার প্রধানমন্ত্রীরও রয়েছে বলে আলোচনায় অভিযোগ তোলেন বৈঠকে উপস্থিত রাজনীতিবিদ, সংগঠক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশ্লেষকরা।
গোল টেবিল বৈঠকে সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের বিচার দ্রুত শেষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু শিশু ত্বকী হত্যার বিচার করতে আপনার এত অনীহা কেন? ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত ওসমান পরিবারকে আপনি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এই সুযোগ নিয়ে এই পরিবারটি যে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে তার দায়িত্বও আপনার।’
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জমান বলেন, ‘দেশে এখন বিচার চাইলেও বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জোর করে বিচার আদায় করতে হবে। ত্বকী হত্যার বিচার পেতে রাজপথে আন্দোলনের বিকল্প নেই।’
সিপিবির সভাপতি মুজাহেদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘চার বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার হলো না। কিন্তু বিচার হতে হবে।’ যারা এই বিচার বাধাগ্রস্ত করেছে তাদেরও বিচারের দাবি করেন তিনি।
বৈঠকে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আজ ত্বকী হত্যাকাণ্ড বিচারহীনতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে আমরা আশা করি সাত খুন মামলার মতো ত্বকী হত্যারও বিচার হবে।’
বৈঠকে বক্তারা বলেন, রাজনের হত্যাকারীকে বিদেশ থেকে ধরে নিয়ে এসে তার বিচার করা হলো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের শিশু ত্বকী হত্যার বিচার হলো না। একে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে ত্বকীকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। পরে ৮ মার্চ তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। সে বছরই ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন নামের এক ঘাতক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে ত্বকীকে হত্যার বিশদ বর্ণনা দেয় সে। এরপর ৮ আগস্ট র্যাব সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশান খ্যাত টর্চারসেলে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে রক্তমাখা প্যান্ট, দড়ি, রক্তমাখা গজারির লাঠিসহ নানা ধরনের আলামত উদ্ধার করে।
ত্বকী হত্যার এক বছরের মাথায় র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক র্যাবের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের কাছে ত্বকী হত্যার খসড়া অভিযোগপত্র সরবরাহ করেন। ওই খসড়ায় বলা হয়, আজমেরি ওসমানের নেতৃত্বর ১১ জন ত্বকীকে হত্যা করেছে। সেসময় তিনি বলেছিলেন, অচিরেই খসড়া অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও তা চূড়ান্ত করে আদালতে দাখিল করা হয়নি।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সভাপতি ও ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা মঞ্জুরুল আহসান খান, ড. মহিউদ্দিন খান, গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক জুনায়েদ সাকী, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব ও ত্বকীর মামা হালিম আজাদ প্রমুখ।
আরও পড়ুন-
দিনে দু’বেলা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন: শিক্ষামন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে বাংলাদেশ: বার্নিকাট
/আরএআর/টিআর/