‘রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার হলে খুনের বিচার হবে না’

 

জাতীয় সংসদ (ছবি: সংগৃহীত)নতুন করে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করার সরকারি উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার করা হলে অনেক খুনেরই বিচার হবে না।’ বৃহস্পতিবার সংসদে নির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ফজলুর রহমান বলেন, ‘সরকারের দায়ের করা মামলা সরকারই কী করে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বলে দাবি করে, তা নিয়ে সবাই বিস্মিত। প্রত্যাহারের সুপারিশ করা মামলার মধ্যে রয়েছে ধর্ষণের মামলা, নাশকতার মামলা, ঘুষ লেনদেনের মামলা, সরকারি টাকা আত্মসাতের মামলা, ডাকাতি মামলা, অবৈধভাবে অস্ত্র দখলে রাখার মামলা, কালোবাজারি, অপহরণ, জালিয়াতি, বোমা ও অস্ত্র মামলা।’

সরকারের এই উদ্যোগের’ সমালোচনা করে এই এমপি বলেন, ‘সরকার মামলার বাদী হয়েও নিজেরাই বলছে, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। কিন্তু যারা মারা গেছেন তাদের সন্তান বা পরিবার কি এই হত্যার বিচার পাবে না? একজন মানুষ খুন হলে তার পরিবার কি সেই খুনের বিচার দেখে যেতে পারবে না?  বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বললে যে মানুষটি হত্যার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলেন, তার পরিবার সেই বিচার পাবে না।’

হয়রানিমূলক বিবেচনায় ৩৪টি হত্যা মামলাসহ নতুন করে ২০৬টি আলোচিত মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। ওই পত্রিকার খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির এই এমপি  বলেন, ‘নব্বইয়ের পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রাজনৈতিক মামলা এখন পর্যন্ত প্রত্যাহার না হলেও রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৬টি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বেশিরভাগ মামলাই আওয়ামী লীগের দুই আমলে দায়ের করা এবং তার অনেকগুলোরই বাদী সরকার।’ তিনি বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট আমলে ২০০৯ থেকে ১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭ হাজার ১৯৮টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছিল। যার অনেকগুলো ইতোমধ্যে আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৩৪টি হত্যা মামলাসহ ২০৬টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। এই ৩৪টি হত্যা মামলায় তো কেউ না কেউ খুন হয়েছে বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।’

পরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘আপনি খবরের কাগজের ওপর ভিত্তি করে এ কথাগুলো বলেছেন। আপনার নিশ্চয়ই জানা উচিত, সরকার যেকোনও মামলাই প্রত্যাহার করতে পারে, যদি তার কাছে গ্রাউন্ড থাকে। সুপারিশ করলে পরে যে আদালতের মামলা তার পাবলিক প্রসিকিউটরের মাধ্যমে ওই আদালতে প্রার্থনা করতে হবে। সরকার সুপারিশ করলেই কোর্ট তা প্রত্যাহার করবেন, এটা কোনও দিনই হয় না। কোর্ট মে রিজেস্ট ইট। আপনি যে কথাটি বলেছেন, যে লোকটি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, তার পরিবার বিচার পাবে না। আপনি যথার্থ বলেছেন। সেই নিরিখে আদালত যে রায় দেবেন, সেই রায় আপনার ওপর যেমনি বাধ্যবাধকতা সরকারের ওপরও তেমনি বাধ্যবাধকতার বিষয় রয়েছে। সুতরাং সরকার সুপারিশ করলেই সেই আমলাটি প্রত্যাহার হবে, তা বলা যায় না। অনুমানভিত্তিক কোনও বক্তব্য না রাখাই শ্রেয়।’

ডেপুটি স্পিকারের পরে পীর ফজলুর রহমানের উদ্দেশে চিফ হুইপ আসম ফিরোজ বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকলে অনেক কথা বলা যায়। পত্রিকার অনেক খবর দেওয়া যায়। কিন্তু কোনটি সত্য, কোনটি অসত্য তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। তার নিশ্চয়ই মনে আছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন কালীগঞ্জে আমাদের ময়েজউদ্দিন ভাই মারা গেলেন। তাকে যে মারল, সেই ভদ্রলোকের নাম আজম। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘটনার পরে ওই জায়গায় গিয়ে তাকে ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ময়েজ উদ্দিন হত্যা মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করিয়ে নিয়েছিলেন।এই উদাহরণ কিন্তু এদেশে আছে। উনি যে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছেন পত্রিকায় দেখে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, সে ধরনের বিবৃতি দেওয়া কোনও রকমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আশি আশা করব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাউসে আসবেন। তিনি ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে কিছু কথা বলবেন। তাকে বলার সুযোগ দিতে হবে।’

 চিফ হুইপ বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন সরকারে ছিলেন, তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, স্বাধীনতা বিরোধীদের মামলার কোনও মামলারই কিন্তু সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করেননি। যারা খুনি তাদের, এই সংসদে আসার সুযোগ দিয়েছিলেন।

/ইএইচএস/এমএনএইচ/