সচিবালয়ে দালাল চক্র

জিওসির নামে আসা ফোন নম্বরটি মুন্সীগঞ্জের এক আ. লীগ নেতার !

দালাল জাকির হোসেন

যশোর অঞ্চলের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার (জিওসি) এর নাম ভাঙিয়ে পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জনের পদোন্নতির জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস-এর কাছে যে নম্বর থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল সেটি আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেতার। তার নাম শরিফুল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তদবির করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া ডেমরার জাকির হোসেনকে ছাড়ানোর জন্য পুলিশের কাছে তদবিরও করেছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পদবিধারী এই নেতা। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপের এক পর্যায়ে তিনি স্বীকারও করেছেন।  কথোপকথনের অডিও রেকর্ড বাংলা ট্রিবিউনের সংগ্রহে আছে।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে যশোরের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমানের নামে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এপিএস মীর মোশাররফ হোসেনের কক্ষে তদবির করতে আসেন জাকির হোসেন এবং পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর। এসময় তাদের আটক করে শাহবাগ পুলিশে খবর দেন মন্ত্রীর এপিএস।

খবর পেয়ে এপিএস-এর কক্ষে ফোর্সসহ উপস্থিত হন সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) কামরুন নাহার। কিছুক্ষণ পরে সেখানে উপস্থিত হন সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের আরেক কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) রাজিব। এসময় সেখানে সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদিকদের সামনেই প্রথমে জাকিরকে জেরা করেন এসি কামরুন নাহার। পরে এডিসি রাজিবও তাকে জেরা করেন। 

জাকির হোসেন জানান, জিওসির নাম ভাঙিয়ে তাকে তদবির করতে পাঠিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল। এসময় সবার উপস্থিতিতে শরিফুলের নম্বর এবং জিওসির ফোন নম্বরটি সংগ্রহ করে পুলিশ। দেখা যায়, জিওসির নম্বরটি হচ্ছে ০১৫১১০৩৯৯৯৯ এবং শরিফুলের নম্বরটি ০১৭৩৪০৩৯৯৯৯।

সচিবালয় পাস

জাকির আরও জানান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জিলানীর মাধ্যমে পাস নিয়ে তিনি সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন। তবে জিওসিকে তিনি কখনও দেখেননি।

আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুলের নম্বর এবং জিওসির নম্বর ভিন্ন অপারেটরের হলেও একই রকমের ডিজিটের বলে তা একজনেরই কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির কোনও কথা বলেননি।

এদিকে, পুলিশি জেরার মুখে পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফর জানান, পদোন্নতির তদবিরের জন্য জাকিরের সঙ্গে তিনি সচিবালয়ে এসেছিলেন। জাকিরের মাধ্যমে পাস সংগ্রহ করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। 

ডা. জাফর আরও বলেন, স্টোরকিপার হাসানের পরামর্শে তদবিরের জন্য তিনি জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জাকির ও হাসানের মাধ্যমে জিওসি মতিউরের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কথা বলেছেন তিনি। তবে মতিউর রহমান নামের ওই লোক জিওসি কিনা তা তিনি কখনও যাচাই করেননি।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস মীর মোশাররফ হোসেন পুলিশকে জানান,  গণভবনে মেজর জেনারেলের অফিস শুনে তার সন্দেহ হয়। এরপর বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য যশোর ক্যান্টনমেন্টে মতিউর নামের কোনও জিওসি আছেন কিনা সেবিষয়ে তিনি খোঁজ নেন। সেখানে এ নামে কোনও জিওসি নেই বলে জানতে পারেন। তবে আগে এই নামে একজন জিওসি ছিলেন। এরপর তিনি পুলিশে খবর দেন।

এরপর জিওসির নামে যে নম্বরটি থেকে ফোন দেওয়া হয়েছিল সেটি যাচাইয়ের জন্য মুন্সীগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক শরিফুলের কাছে ফোন দেন এই প্রতিবেদক। শরিফুল প্রথমে ‘০১৫১১০৩৯৯৯৯’ এই নম্বরটি তার বলে স্বীকার করেন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে।  এমনকি জাকিরকে তিনি থানা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও জানান। কীভাবে থানা থেকে জাকিরকে ছাড়ানো যায় তার পরামর্শও চান। তবে থানায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মামলা হয়েছে হয়েছে শুনে ‘০১৫১১০৩৯৯৯৯’ নম্বরটি তার নয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এদিকে, পদোন্নতির জন্য তদবিরের বিষয়টি রবিবার বিকালে জানার পর পাবনার সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিষয়টি জানার পর পাবনা সদর আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম পারভেজ খন্দকার প্রিন্সকে ফোন দেন জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাংবাদিক এবং পুলিশের উপস্থিতিতে কথা বলেন মন্ত্রীর এপিএস। 

এমপি গোলাম পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী এপিএস-এর সঙ্গে কথা বলার পর আমি মন্ত্রীকেও সুপারিশ করেছি ডেপুটি সিভিল সার্জনের জন্য। কারণ উনি নিরীহ ব্যক্তি, তাকে সচিবালয়ের তদবিরকারী দালাল চক্র ফাঁসিয়েছে।’

/এসটি/ 

আরও পড়ুন: ডেপুটি সিভিল সার্জনের পদোন্নতির তদবির করতে গিয়ে আটক দালাল