নারী হলেও তাদের স্বপ্নটা ছিল আকাশ ছোঁয়ার। নীল আকাশের বুকে মেঘের ভেলার মতো উড়ে বেড়ানোর। শত প্রতিকূলতার পরও সেই স্বপ্নটা পূরণ করেছেন তারা। পাইলট হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছেন আকাশের বুকে। আর এর মাধ্যমে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা অন্য নারীদের স্বপ্ন পূরণেরও পথিকৃৎ হয়েছেন। তারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এয়ারলাইন্স বিমান বাংলাদেশের নয় নারী পাইলট।
যেকোনও চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও এখন পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলেছেন আমাদের দেশের নারীরা। এয়ারলাইন্সের পাইলট পদেও তাই এখন পদচারণা বাড়ছে নারীদের। একটা সময় পর্যন্ত দেশে নারী পাইলটের দেখা না মিললেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৪০ জন পাইলটের মধ্যে এখন নারী পাইলটের সংখ্যা নয় জন। পুরুষদের মতোই তারাও সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন পেশাগত দায়িত্ব।
বাংলাদেশ বিমানের এই নয় জন নারী পাইলট হলেন— ক্যাপ্টেন তাসমিন, তানিয়া রেজা, আলিয়া, শাহানা, ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান, মুনজারিন রাইয়ান, শুমায়লা সিদ্দিকা হোসেন, ফারিয়েল রহমান, ও অন্তরা। বাংলা ট্রিবিউনকে তারা জানিয়েছেন নিজেদের স্বপ্ন পূরণের গল্প।
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, আজ ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের একটি উড়োজাহাজে এই ফ্লাইটের পাইলট থেকে কেবিন ক্রু— সব দায়িত্বে থাকবেন নারীরা। ফ্লাইটটি পরিচালনা করবেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা এবং ফার্স্ট অফিসার অন্তরা। এছাড়াও, এই ফ্লাইটের দুই জন ককপিট ক্রু ও ছয় জন কেবিন ক্রু’র দায়িত্বেও থাকছেন নারীরা।
পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুটা কিভাবে— জানতে চাইলে তানিয়া বলেন, ‘মামাদের অনেকেই বিমান বাহিনীতে কাজ করতেন। ছোটবেলায় তাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। ১৯৯৩ সালে ফ্লাই একাডেমিতে ভর্তি হই। এরপর আমেরিকায় গিয়ে কোর্স সম্পন্ন করি। এরপর ২০০০ সালে দেশে এসে বিমানে যোগ দিয়েছি। যে মামাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, তাদের অনেকের সঙ্গেই ফ্লাই করার সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার বড় একটি সৌভাগ্য।’
পাইলট হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে তানিয়া বলেন, ‘প্রথম ফ্লাইটের অনুভূতিটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। এখনও বিমান চালাতে রোমাঞ্চ বোধ করি। বিমানের দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় নারী বলে কখনও প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। পরিবারের সবার সমর্থন পেয়েছি বলেই ফ্লাইটে উঠে ১১ বছর ও ৬ বছরের দুই মেয়ে রেখে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি।’
দেশের অনেক নারীই পাইলট হতে চাইলেও তাদের এই লক্ষ্য পূরণের উপায় জানা নেই বলে মনে করেন তানিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেকে পাইলট হতে চাইলেও জানেন না কিভাবে এই পেশায় আসতে হয়। তাদের সামনে সেই পথের কথা তুলে ধরতে হবে। আর সবার আগে প্রয়োজন নিজের দৃঢ় ইচ্ছা। এর সঙ্গে পরিবারের সমর্থন পেলেই এই পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে।’
২০১১ সালে বিমানে যোগ দেওয়া মুনজারিন বলেন, ‘এ পেশায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ। একটি ফ্লাইটের নিরাপত্তাসহ সবকিছু দেখভাল করতে হয়। তবে এই পেশায় প্রতিদিনই নতুন কিছু শেখার থাকে। এজন্য বেশি ভালো লাগে। আর যখন আমরা ইউনিফর্ম পড়ি, তখন আমরা নারী বা পুরুষ নই, তখন আমরা ক্রু। ফলে নারী বলে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। দক্ষতা দেখাতে পারলে কোনও এগিয়ে যেতে কোনও বাধা নেই।’
আনিতা রহমানও বললেন, নারী পাইলট হিসেবে কোনও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় না তার। আর পরিবারের সমর্থন পাচ্ছেন বলে নিজের স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। বর্তমানে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে কাজ করা আনিতা এর আগে জিএমজি এয়ালাইন্সেও এক বছর কাজ করেছেন।
শুমায়লা সিদ্দিকা বলেন, ‘বাংলাদেশে এভিয়েশন খাতে নারীদের অনেক সুযোগ আছে। তবে পরিবারের সহায়তা প্রয়োজন। পরিবারের সর্মথন থাকলে পথ চলা সহজ হয়। পাইলট হওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অদ্যম ইচ্ছা থাকাটা জরুরি।’
আরও পড়ুন-
নারী দিবসে বাংলা ট্রিবিউনের নেতৃত্বে আবারও নারীরা
পলিসি বাস্তবায়ন: নারীর অবস্থান হতাশাজনক