‘গণহত্যা দিবস’ পালন এ বছরেই, শিগগিরই ঘোষণা

 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার ছবি (ছবি: সংগৃহীত)চলতি বছর থেকেই ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসবে। সোমবার অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকেও এ বিষয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস জোটগতভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শনিবার জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় আনীত ২৫ মার্চকে 'গণহত্যা দিবস' হিসেবে পালনের একটি প্রস্তাব সর্বসন্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ওই প্রস্তাব পাসের আগে অনুষ্ঠিত সাধারণ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৬ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে প্রস্তাবটি গ্রহণের কথা বলে একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যত গণহত্যা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের ২৫ মার্চের হত্যাকাণ্ড ছিলে সবচেয়ে মর্মান্তিক।’ ওই সময় প্রকাশিত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ছবি ও খবরই গণহত্যার সব থেকে বড় প্রমাণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন ও আন্তর্জাতিকভাবে এর স্বীকৃতি আদায় বিষয়ে একটি প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও আইনজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংসদ থেকে কোনও ধরনের সিদ্ধান্ত বা সুপারিশ এলে সেটা সরকারের বাস্তবায়ন করা অনেকটা বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে যায়। ফলে শনিবার গণহত্যা দিবস পালনের যে প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হয়েছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে বলা যেতে পারে। তবে, বিষয়টি বাস্তবায়নের আগে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তা গেজেট আকারে জারি করার প্রয়োজন পড়বে বলে তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেরিতে হলেও জাতীয় সংসদ একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর সিদ্ধান্ত যেহেতু সংসদ থেকে এসেছে, সেহেতু এটি সরকারের জন্য তা অবশ্যই পালনীয় হয়ে পড়েছে। সংসদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়বে না।’ দিবসটির বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই আইনজীবী।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৫ মার্চ জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনে সংসদে যে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, আমরা এ বছর থেকেই সেটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ বিষয়ে শিগগিরই গেজেট নোটিফিকেশন করে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ থেকে যেহেতু সিদ্ধান্ত এসেছে, সে জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদনের দরকার পড়বে না। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং সাপেক্ষে গেজেট জারি করলেই হবে। তবে, আমি আগামীকাল (সোমবার) বিষয়টি মন্ত্রিসভায় তোলার চেষ্টা করব। আর সেখান থেকে কোনও সিদ্ধান্ত এলে নিশ্চয়ই ভালো হবে।’

দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনে কর্মসূচি করে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তার অনুমোদন নেওয়া হবে বলে জানান আ ক ম মোজাম্মেল হক। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিণ্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে কর্মসূচির বিষয়ে অভিমত নেওয়ার কথাও জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

এদিকে রবিবার অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের সভায় ২৫ মার্চ ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’’ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দিলে তার বিষয়ে সবার একমত পোষণ করেন। দিবসটি জাতীয়ভাবে পালনের পাশাপাশি গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যাগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ১৪ দল।

আগামী ২৫ মার্চ দেশব্যাপী ১৪ দল কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করবে জানিয়ে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এর মাধ্যমে দেশবাসীকে আমরা পাকিস্তানিদের বর্বরতা মনে করিয়ে দিতে চাই। তাদের এখনও বোধোদয় হয়নি। লেখালেখিসহ নানাভাবে তারা গণহত্যাকে অস্বীকার করছে। কিন্তু এই নির্লজ্জ ও পাপিষ্ঠ জাতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থেমে নেই। তাদের বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’ এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ দিবসটি পালন করা হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনে রবিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের স্থল নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় বদ্ধভূমি থাকলে সেটাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

 আরও পড়ুন: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার ছবি 

/এমএনএইচ/