মডেল থানা কখনোই ‘মডেল’ ছিল না!

ধানমণ্ডি মডেল থানা

মডেল থানা কখনোই মডেল ছিল না বলে জানিয়েছেন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি)। তাদের মতে, সব থানাই মডেল, আবার কোনোটাই মডেল না। মডেল থানায় যেসব উপকরণ ও সুবিধা থাকার কথা ছিল। সেটা কখনোই ছিল না। অবকাঠামো, গাড়ি ও আবাসনসহ কোনও কিছুতেই থানাগুলো কখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ থানা হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। তবে কোনও ওসিই এসব কথা পরিচয় প্রকাশ করে বলতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, নাম দিয়ে এসব বক্তব্য দিলে ‘স্যারেরা মাইন্ড’ করতে পারেন।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, ডিএফআইডি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নে ২০০৫ সালে শুরু হয় সংস্কার কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের একটি প্রজেক্ট ছিল ‘মডেল থানা’। শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের পর গত বছরের ডিসেম্বরে পুলিশ সংস্কার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তাই মডেল থানা নিয়ে যেসব কার্যক্রম চলমান ছিল, তাও বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। মডেল থানা ছাড়াও কমিউনিটি পুলিশিং, নারী পুলিশ নেটওয়ার্ক তৈরিতে সহায়তা, পুলিশ প্রশিক্ষণের জন্য পাঠ্যক্রম, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারগুলো এ প্রকল্পের আওতায় ছিল। পুলিশের আইন সংস্কার নিয়েও কিছু কাজ করা হয়।

চারটি মডেল থানায় দায়িত্ব পালনের পর এখন রাজধানীর আরেকটি মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের এক ইনস্পেক্টর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ওসি বলেন, ‘‘পুলিশ সংস্কার কার্যক্রমের একটি প্রজেক্ট ছিল ‘মডেল থানা’। এটি হওয়ার কথা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। লবণের বাটি থেকে শুরু করে কনফারেন্স রুমসহ যা যা থাকার প্রয়োজন, এ সংক্রান্ত সবধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট থাকবে। এটা হচ্ছে মডেল থানা। অথচ আমাদের এই মডেল থানায় এগুলোর কিছুই নেই।’’

ধানমণ্ডি মডেল থানা

এই ওসি বলেন, ‘নামে মডেল, কিন্তু বাস্তবের মডেলের যে নমুনা, তার কিছুই নেই। কয়েকটি মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও কোথাও মডেল বলতে যা বোঝানো হয়েছিল, তা ছিল না। বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর থাকবে। গাড়ির প্রয়োজন ১০টি। আছে তিনটি। তাহলে মানুষকে পর্যাপ্ত সেবা কিভাবে দেবেন? কোথাও পরিপূর্ণ কোনও মডেল থানা বলতে কিছু পাইনি। থানায় আগত একজন সেবাপ্রার্থীকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়াই মডেল থানার কাজ ছিল। কলমটা পর্যন্ত সরবরাহ করার কথা। অপারেশন, ইন্টেলিজেন্স ও ইনভেস্টিগেশনে আলাদা টিম থাকার কথা ছিল। যেন থানার সব সদস্য সব বিষয়ে পারদর্শী হতে পারেন। প্রত্যেক মডেল থানায় একটি করে অ্যাম্বুলেন্স থাকার কথা ছিল সেটাও হয়নি।’

রাজধানীর শ্যামপুর মডেল থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মডেল থানা যখন ঘোষণা করা হয়, তখন পুলিশ সংস্কার কর্মসূচির প্রজেক্ট থেকে কিছু লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছিল। এখন তো আর এ কার্যক্রম নেই। তাই এখন আর আট-দশটা থানা যেমন এটাও তেমন। মডেল থানা হিসেবে আলাদা কোনও সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছু নেই। গাড়ি, অফিসার ও সদস্য সংকট সবই আছে। নাম যেহেতু মডেল তাই সেই চেতনা নিয়ে সেবাটা ভালো দেওয়ার চেষ্টা করি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মডেল থানার সেই কার্যক্রম আর নেই। আগে যখন পুলিশ সংস্কার কার্যক্রম ছিল, তখন মডেল থানার কিছু বাড়তি কার্যক্রমও ছিল। পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের সব থানাকেই মডেল থানার দৃষ্টিতে অর্থাৎ সমান চোখে দেখা হয়। আলাদাভাবে দেখা হয় না। সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সব থানা থেকেই।’ সব থানার অবস্থা উন্নয়নে পুলিশ সদর দফতরের বিভিন্ন পদক্ষেপও অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এমএনএইচ/