‘কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’

 

বঙ্গোপসাগরে মহড়ায় কোস্টগার্ডের জাহাজ সিজিএস তাজউদ্দিনবাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশ সরকার এখন সমুদ্রের সম্পদ সংরক্ষণে কোস্ট গার্ডকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

মঙ্গলবার কোস্ট গার্ডের সিজিএস তাজউদ্দিন জাহাজের মহড়া পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। কোস্ট গার্ডের টহল কার্যক্রম পরিচালনা, অন্য জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল ও শত্রুপক্ষ দমনে শক্তিশালী কামান ব্যবহার করার মহড়া দেখতে এই বাহিনীর আমন্ত্রণে বঙ্গোপসাগরে যান কয়েকজন সাংবাদিক।

এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্র সীমানা সংরক্ষণের দায়িত্ব কোস্ট গার্ডের ওপরে পড়েছে। তাই কোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। কোস্ট গার্ডের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।  

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশাল সমুদ্র সম্পদের মূল্যায়ন আস্তে আস্তে হওয়া উচিত। এ বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

কোস্ট গার্ডের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে পাশের দেশ থেকে ট্রলার এসে মাছ ধরে নিয়ে যেত, কিন্তু সেই সংখ্যা এখন শূন্যের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। সবাই এ বার্তা পেয়েছে যে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গেলে ছাড় পাওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির ফলে সারা বিশ্বে আমাদের নৌবাহিনীর অবস্থান ১৩৭ থেকে উন্নীত হয়ে ৪৬তম হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় সার্ক স্যাটেলাইটেও যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা আছে বাংলাদেশের।’

সিজিএস তাজউদ্দিন জাহাজে কোস্ট গার্ড সদস্যদের মহড়াকোস্ট গার্ডকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাকে সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে কোস্ট গার্ড শুধু সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত। কিন্তু সমুদ্রপথে মাদক, অস্ত্র সহ নানা রকম চোরাচালান যে হয়ে থাকে, তা কিন্তু শেষ পর্যন্ত জঙ্গিবাদে অর্থায়নের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদ দমন বিষয়ক জাতীয় টাস্ক ফোর্সের আওতায় কোস্ট গার্ড ভূমিকা রাখবে।’

এসময় কোস্ট গার্ডের উপ-মহাপরিচালক কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা বাড়াতে নানা প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা ১১টি নতুন জাহাজ, জাহাজ টেনে আনার জন্য টাগ এবং স্যালভেজ জাহাজ তৈরি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে চারটি অফশোর পেট্রোল ভেসেল সংগ্রহ করেছি, যার দুটি কোস্ট গার্ডে সংযুক্ত হয়েছে এবং বাকি দুটি আগস্টে সংযুক্ত হবে। এই চারটি নৌযান ইতালি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।’

কমোডর ইয়াহিয়া সাঈদ জানান, সম্প্রতি খুলনা শিপইয়ার্ডে দুটি বৃহদায়তনের টহল জাহাজ নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করেছে বাংলাদেশ। সাবমেরিনের টেনে আনার জন্য যে বিশেষ ধরণের টাগ ব্যবহৃত হয়, সেটিও খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হয়েছে।

নারায়াণগঞ্জ শিপইয়ার্ডেও কোস্ট গার্ডের জাহাজ তৈরি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

সিজিএস তাজউদ্দিন ও সিজিএস নজরুল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজ। এ দুটি জাহাজ গত জানুয়ারি মাসে কোস্ট গার্ডে সংযুক্ত করা হয়।

একটি জাহাজে শত্রুকে পরাস্ত করার জন্য শক্তিশালী কামান এবং অন্য জাহাজে আগুন নেভানোর কামান ও সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টি-পলিউশন গিয়ার রয়েছে।

এএআর/