হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পার করেছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘রেড লাইন অ্যাসিউরড সিকিউরিটি’। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সরাসরি কার্গো ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা জারি করা যুক্তরাজ্যের পরামর্শেই শাহজালালে ২ বছরের জন্য দায়িত্ব পায় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তির একবছর পেরিয়ে গেলেও কার্গো পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি যুক্তরাজ্য, বরং চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে তৎপর তারা। তবে রেড লাইনের সঙ্গে চুক্তির পর বিমানবন্দরে কি অগ্রগতি হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, গত একবছরে রেড লাইন সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পরামর্শ দেয়। ইতিমধ্যে রেড লাইনের পরামর্শে আরেক ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘স্মিথ ডিটেকশন’ থেকে কেনা হয়েছে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্র। এসব যন্ত্র শাহজালালে বসানোর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশাপাশি রেডলাইনও চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সিভিল এভিয়েশনে প্রস্তাব দিয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) ব্রিটিশ একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিয়েশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এর আগে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দল মতামত দেয়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে কার্গো ভিলেজ থেকে পণ্য উড়োজাহাজে উঠানোর সময়টি এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। রেড লাইনের মাধ্যমে কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি প্রশংসায় এলেও অভিযোগ রয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করছে না।
রেড লাইন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৩ মার্চ থেকে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মকর্তা, ম্যানেজারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে রেড লাইন। এ পর্যন্ত ১ হাজার ২৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষক হিসেবে ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে রেডলাইন। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যগামী যাত্রীদেরও রেড লাইনের তত্ত্বাবধানে সরাসরি তল্লাশি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেড লাইনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচিক) আমাদেরকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে মানা করেছে। ফলে তাদের অনুমতি ছাড়া বিশেষ কোনও তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।’
জানা গেছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বিশেষ প্রকল্প গত বছর ৮ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন দেয়। দেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয় ৮৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিট্রিশ একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। তারা আগামীকাল (২৮ মার্চ) সিভিল এভিয়েশনসহ সশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করবে।’
রেড লাইন প্রসঙ্গে আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেডলাইন আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রেড লাইনের সঙ্গে দু’বছরের চুক্তি, সেসময় পর্যন্ত তারা কাজ করবে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
/এমও/এমপি/