আইপিইউ সম্মেলন: ভাবমূর্তি রক্ষার পরীক্ষায় তৎপর শাহজালাল

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঢাকায় ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনকে ঘিরে ভাবমূর্তি রক্ষার পরীক্ষায় তৎপর হয়ে উঠেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে নানামুখী উদ্যোগ।
আগামী ১ থেকে ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে আইপিইউ সম্মেলন। এ আয়োজনে যোগ দেবেন ১৩১টি দেশের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ সদস্যসহ প্রায় দেড় হাজার অতিথি। এই বিপুলসংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ অতিথি ঢাকায় আসা-যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে যেন কোনও নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হন, সেজন্য থাকছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সূত্র জানায়, রাজধানীতে অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক আত্মঘাতী হামলা হওয়ায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা ত্রুটি চিহ্নিত করে শাহজালাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর প্রেক্ষিতে ভিআইপি অতিথিদের জন্য এরই মধ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে।
গত ২৮ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বিমানবন্দরের দর্শনার্থী প্রবেশে ১৪ দিনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি। ফলে যাত্রীদের সঙ্গে স্বজনরা বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া বিমানবন্দরের প্রবেশ মুখগুলোতে বসানো হয়েছে আর্চ ওয়ে। বিমানবন্দরের প্রবেশ মুখেই তল্লাশিসহ চেক করা হচ্ছে যাত্রীদের টিকেট।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (ভারপ্রাপ্ত) পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দর্শনার্থী প্রবেশে জারি করা হয়েছে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা।’

জানা গেছে, সম্মেলনে যোগ দিতে অতিথিরা বুধবার (২৯ মার্চ) থেকেই ঢাকায় আসা শুরু করেছেন। তবে বেশিসংখ্যক অতিথি আসবেন সম্মেলনের আগের দিন (৩১ মার্চ)। তাদের সহযোগিতার জন্য বিমানবন্দরের কর্মীদের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকেও লোকজন থাকবে বলে জানা গেছে।

সার্বিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “অতিথিদের ব্যাগ দ্রুত সরবরাহ করার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ট্যাগ। ফলে ট্যাগ দেখে এসব ব্যাগ দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়া অতিথিরা যেসব ফ্লাইটে আসবেন, তার তালিকা অনুযায়ী নজর রাখা হবে। এমনিতেই স্বাভাবিকভাবে বিমানব্ন্দরের নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও মনিটরিং করা হচ্ছে।’

জানা গেছে, ট্যাগযুক্ত ব্যাগগুলো একই কন্টেনারে রাখার জন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে বলেছে সিভিল এভিয়েশন। এছাড়া অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়ার জন্য ভিআইপি টার্মিনালে ছয়টি ডেস্ক খোলা হয়েছে বলে জানান ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন কর্মকর্তা।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড সার্ভিস দেয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অতিথিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে অতিথিদের ব্যাগ সরবরাহ করতে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছে সিভিল এভিয়েশন। এছাড়া জাতীয় সংসদ আর মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগও অনুষ্ঠিত হয়েছে একাধিক বৈঠক। অতিথিদের ব্যাগ সরবরাহ ও দ্রুত সময়ে ভিসা প্রদান করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুরো কার্যক্রম তদারকি করছে সিভিল এভিয়েশন।

সম্মেলন শেষে ৬ এপ্রিল থেকে অতিথিরা ঢাকা ছাড়বেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক ভিআইপি অতিথিকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানো ও ব্যাগ সরবরাহের পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার অতিথিকে সেবা দেওয়া চ্যালেঞ্জের বিষয়। ব্যাগেজ নিয়ে তাদের যেন বিড়ম্বনায় পড়তে না হয় সেটাও ভাবার বিষয়। সংশ্লিষ্ট সব দফতর, সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই যেন আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয় সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছে মন্ত্রণালয়।’

জানা গেছে,এবারই প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও আইপিইউর যৌথ উদ্যোগে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকায়। ১ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন এবং আইপিইউ ওয়েব টিভি উদ্বোধন করবেন তিনি।

আয়োজক দেশ হিসেবে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আইপিইউ সম্মেলনের অন্যান্য আয়োজন থাকছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)।

/সিএ/জেএইচ/