রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত শিল্প শ্রমিকদের মজুরি কাঠামো নির্ধারণের লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ায়ে অধীনে জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ গঠন করা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয় সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে। ওই কমিশন গত বছর ১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেয়। ১৮ সদস্যের কমিশন ১৯টি বৈঠকের মাধ্যমে গত ২৮ মার্চ প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। এরপর সুপারিশসহ নতুন মজুরি কাঠামো জমা দেয় শ্রম মন্ত্রণালয়ে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে গেছে, কমিশন ‘জাতীয় বেতন স্কেল- ২০১৫’ এবং ‘জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১০’কে ভিত্তি করে সুপারিশ চূড়ান্ত করে। সুপারিশ তৈরির আগে কমিশন রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি করপোরেশনের ১৪টি প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালায়।
মজুরি কাঠামো তৈরি ও সুপারিশ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সঙ্গতি, মুনাফা, উৎপাদন ক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা, জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজন, মাথাপিছু আয় ও তুলনীয় সামাজিক গোষ্ঠীর আয়, শ্রমিকদের যৌক্তিক সংখ্যা নির্ধারণ, উৎপাদনশীলতা ও মজুরির ওপর প্রভাব, উৎপাদন ব্যয় ও এর প্রতিযোগিতার ক্ষমতা ও আর্থ সামাজিক দিক বিবেচনায় নেয় কমিশন।
সুপারিশ চূড়ান্ত করার সময় কমিশন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অধিকাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান লোকসানি হলেও বাস্তবতা বিবেচনা করে শ্রমিকদের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মজুরি কাঠামো ও ভাতা দেওয়ার সুপারিশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে কমিশন।’ এ বিষয়ে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করা উচিত হবে না। তবে এতটুকু বলতে পারি, যুগের চাহিদা বিবেচনায় মজুরি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কিছু সুপারিশ করেছি। বার বার যেন কমিশন গঠন করতে না হয়, সে ধরনের সুপারিশও আমাদের প্রতিবেদনে রয়েছে।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কমিশনের সুপারিশ পেয়েছি। তবে সুপারিশে কী রয়েছে, তা এখনও দেখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা সময় চেয়েছি। তিনি সময় দিলে তার সঙ্গে দেখা করে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মজুরি কাঠোমো হস্তান্তর করব। এরপর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।’ মে মাসের মধ্যে এটা হতে পারে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
কমিশনের সদস্য মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ করে সরকারকে দিয়েছি। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ই সিদ্ধান্ত নেবে।’
কমিশনের সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি মো. জালাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সুপারিশ চূড়ান্ত করেছি। জাতীয় বেতন স্কেলের মতো আগে থেকেই কার্যকর করার সুপারিশ রয়েছে। জাতীয় বেতন স্কেলের মতো শ্রমিকদের মজুরিও গড়ে শতভাগ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। তবে বাস্তবায়ন কী হবে, তা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এই বিষয়ে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে।’
উল্লেখ্য, জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন ২০১০-এ রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানার শ্রমিকদের মজুরি প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ওই সময় তাদের সর্বোচ্চ মজুরি পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন চার হাজার ১৫০ টাকা ধরে মজুরি কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল। নতুন কমিশনের প্রতিবেদনে কলকারখানার শ্রমিকদের সর্বোচ্চ ১১ হাজার ও সর্বনিম্ন প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা বেতন পুনঃনির্ধারণের সুপারিশ রয়েছে বলে জানা গেছে। শ্রমিকদের মজুরিতে চলমান ১৬টি ধাপ থেকে কমানোর সুপারিশও রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানায় বর্তমানে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার।
/এসএমএ/এমএনএইচ/