শাহজালালে লাগেজ ভোগান্তি কমাতে ‘রেড ক্যাপ’ সেবা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ছবি: সংগৃহীত)

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যাগেজ দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে ‘রেড ক্যাপ’ সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গত এক বছরে এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এ সেবার মান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেয় বিমান। ‘রেড ক্যাপ’ সেবার মাধ্যমে ব্যাগেজ সরবরাহ প্রক্রিয়া মনিটরিং ও সমন্বয় করা হচ্ছে। এই সেবা চালুর পর থেকে দ্রুত সময়ে যাত্রীদের ব্যাগেজ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে বলে দাবি করছেন বিমানের কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এককভাবে দু’ধরনের হ্যান্ডলিং করে থাকে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং-এর আওতায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও যাত্রীদের লাগেজসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। কার্গো হ্যান্ডলিং এর আওতায় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানিতে সেবা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজের মধ্যে রয়েছে বোর্ডিং পাস ইস্যু, ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং, কার্গো লোড-আনলোড ও এয়ারক্রাফট সার্ভিসসহ বিভিন্ন কার্যক্রম। দেশের বিমানবন্দরগুলোতে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনায় এসব সেবা দেয় বিমান।

সূত্র জানায়, ‘রেড ক্যাপ’ সেবার আওতায় উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়নের মাঝের সময়ে গ্রাউন্ড হ্যাণ্ডলিং-এর পুরো বিষয়টি সমন্বয় ও নজরদারি করেন বিমানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। বর্তমানে শাহজালালে প্রতি শিফটে  চার জন করে মোট আট জন কর্মকর্তা ‘রেড ক্যাপ’-এর দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কর্মকর্তা ফ্লাইটের সময় দ্রুত সেবা দিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (কাস্টমার সার্ভিস) আতিক সোবহান বলেন, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেড ক্যাপ সেবা চালুর ফলে সেবার মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। কয়েকমাস আগে ফ্লাইট অবতরণের পর যাত্রীদের ব্যাগেজ সরবরাহ করতে গড়ে এক ঘণ্টা সময় লাগতো। বর্তমানে ব্যাগেজ সরবরাহে সময় লাগছে মাত্র ৩০ মিনিটের মতো। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কারণে বেশি সময় লেগে যায়।

জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আয়ের অন্যতম উৎস বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা। এ আয়ের মাধ্যমেই বিমানের প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক বেতন পরিশোধ করা হয়। যদিও বিমানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ  দীর্ঘদিনের। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দিনে ২৬৬টি ফ্লাইট  ওঠানামা করে। যাত্রীদের অভিযোগ, উড়োজাহাজ অবতরণের পর  লাগেজ পেতে তিন-চার ঘণ্টা লেগে যায়। মাঝে মাঝে লাগেজ হারিয়ে যায় এবং মালামাল চুরিও হয়।

বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মীরা জানান, গ্রাউন্ড সার্ভিসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। নতুন যন্ত্রপাতি না আসা পর্যন্ত সংকট মোকাবিলা করা কঠিন। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নিয়মিত মনিটরিংও করেন না। ফলে কাজের সমন্বয় হয় না।

এ প্রসঙ্গে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘রেড ক্যাপ সেবা চালু ছাড়াও ব্যাগেজ ডেলিভারির সময় কমিয়ে আনতে গ্রাউন্ড সার্ভিসের জন্য  ৫০টি আধুনিক যন্ত্র আমদানি করা হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনা করতে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।ফলে গ্রাউন্ড সার্ভিসের মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস বিমানের আয়ের বড় একটি খাত। নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে গ্রাউন্ড সার্ভিস নিয়ে। সংকট কাটিয়ে সেবার মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেড ক্যাপের সেবা চালুর ফলে গ্রাউন্ড সার্ভিসের সেবা উন্নত হচ্ছে।’

তিনি বলেন,‘গ্রাউন্ড সার্ভিস দ্রুত করতে বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যাও বাঁধা। প্রতিনিয়ত ফ্লাইট ও যাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের বিমানবন্দরের এত ধারণ ক্ষমতা নেই। বোর্ডিং ব্রিজসহ যে পরিমাণ গ্রাউন্ড সাপোর্ট যন্ত্রপাতি দরকার তাও নেই। তবে বর্তমানে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি আমদানি করা হচ্ছে। ফলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান আগের চেয়ে বাড়বে।’

/সিএ/এপিএইচ/