গণপরিবহনে ২৩ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার

 

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘নারী সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে আলোচকরাগণপরিবহনে ড্রাইভার, হেলপার ও সহযাত্রীর মাধ্যমে  ২২.৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে তথ্য জানানো হয়েছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘নারী সংবেদনশীল নগর-পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে। শনিবার বিশ্ব নিরাপদ শহর দিবস উপলক্ষে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৭৮.৫ শতাংশ নারী বলেছেন, বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। রাজধানীর ৮৬ শতাংশ নারী যানজট নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

গবেষণা প্রতিবদেন আরও বলা হয়েছে, রাজধানীর ৯৪ শতাংশ নারী নানা কারণে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন না। এমনকি পুরুষ সঙ্গী ছাড়া তারা একা টয়লেট ব্যবহার নিরাপদ মনে করেন না। গণপরিবহন, রাস্তাঘাট, ফুটপাত, পাবলিক টয়লেট, পার্কের মতো গণপরিসরে নারীদের ব্যবহার উপযোগিতা সীমিত। নগরের কাঠামোগুলো নারীবান্ধব না হওয়ায় এই অবস্থা। ফলে শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা ও সহিংসতার ভয়ে গণপরিসর এড়িয়ে চলতে হয় নারীদের।

২০১৬ সালের এপ্রিল ও মে মাসে নগরের বিভিন্ন বয়সী ও পেশার ২০০ জন নারীর মধ্যে গবেষণাটি চালানো হয়। তাদের অনেকেই ফুটপাতকে হাঁটার উপযোগীও মনে করেন না।এই নারীদের অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে একটি মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়। আলোচকদের মধ্য থেকে জানানো হয়, বিচ্ছিন্নভাবে নগর উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়, যেখানে গরিব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ নারী ও প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। আলোচকরা কিশোরীদের জন্য খেলার মাঠ থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  নারীকে উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে ভাবার পরামর্শও দেন। তারা মনে করেন, নারীর উন্নয়ন কেবল ভাবনার মধ্যে রাখলে হবে না। এটিকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

গবেষণায় দেশে বিদ্যমান নীতি ও আইনের প্রেক্ষাপটও বিশ্লেষণ করা হয়। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় ৫ ধারায় লিঙ্গ সমতা ও নারী ক্ষমতায়নের কথা বলা হয়েছে। এই লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে নারীদের সব বৈষম্য ও সহিংসতা দূরীকরণ, গৃহস্থালী কাজের স্বীকৃতি দেওয়া, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপযুক্ত ও প্রয়োগযোগ্য আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘ঢাকায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী হলেও এখনও এ শহর নারীবান্ধব নয়। যারা হেঁটে কষ্ট করে চলাচল করেন, তাদের উপযোগী নয়।’

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক আখতার মাহমুদ। তিনি বলেন,‘ নগর-পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত নারীর অংশগ্রহণ না থাকার কারণে নারীবান্ধব শহর তৈরি করা সম্ভব হয়নি।’

গবেষণার সুপারিশ অংশে বলা আছে, যেকোনও প্রকল্প প্রণয়নের ধারণাপত্র থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়ে নারী সংবেদনশীল ধ্যান-ধারণার প্রতিফলন থাকতে হবে; নারীবান্ধব শহর ও কমিউনিটি উন্নয়নের পরিকল্পনা নীতি তৈরির সময় নারী সংগঠনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যানের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে নারী সংবেদনশীল কৌশলনীতি অবশ্যই ব্যাখ্যা করতে হবে।

অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে, মূলধারার পরিবহন পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনায় নারী সংবেদনশীল নীতি গ্রহণ করা; নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী রাস্তা, ওয়েটিং স্টেশন, টার্মিনাল ও স্টপেজ নির্মাণ করা; পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠে অবৈধ দখলদারিত্ব প্রতিহত করা।

/ইউআই/ এমএনএইচ/