সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর চার প্রস্তাব

আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে আগত বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি- ফোকাস বাংলা)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় রাজনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ দূর করার মাধ্যমে এ বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এ বিষয়ে তিনি চারটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন— সন্ত্রাসীদের অস্ত্র সংগ্রহের পথ বন্ধ করা, তাদের অর্থ সংগ্রহের উৎস বন্ধ করা, মুসলিম বিশ্বের মধ্যেকার বিভেদ দূর করা এবং সংলাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।

রবিবার (২১ মে) সৌদি আরবের রিয়াদে আরব ইসলামিক আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় সংক্ষেপের কারনে তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান দেড় ঘণ্টায় শেষ করা হয় বলে তিনি বক্তব্য দিতে পারেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কপি সম্মেলনে বিতরণ করা হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।

রিয়াদে অনুষ্ঠিত এই শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘একজন সন্ত্রাসীর কোনও ধর্ম নেই, বিশ্বাস নেই বা জাতি নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং এটি কখনই সহিংসতা সমর্থন করে না।’ সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ইসলামকে যেন না জড়ানো হয়, সে বিষয়ে এ সম্মেলন থেকে একটি ঘোষণা দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের কষ্ট ও বঞ্চনা যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে অবিচারের বোধ জন্ম দেয় উল্লেখ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।

ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধাবিধ্বস্ত দেশগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভিযান ও সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণ করে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। এসময় সন্ত্রাস ও উগ্রবাদকে বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের এবং সভ্যতার জন্য বড় ঝুঁকি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবিলা করছি। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সব শ্রেণি, বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র ও দেশব্যাপী বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন।’

আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সৌদি বাদশা সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বাদশা সালমানকে ধন্যবাদ জানান।

আরও পড়ুন-

বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের অগ্রভাগে রয়েছে ইরান: সৌদি বাদশা

জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে: ট্রাম্প
/এসএসজেড/টিআর/