দেশের সর্ববৃহৎ ও কেন্দ্রীয় কারাগার ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর। রবিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এই কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা মানুষের ভীড় ছিল উপচে পড়া। সবাই বাসা থেকে বন্দিদের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে এসেছেন।
হেনা বেগম বলেন, ‘তার ছেলে নির্দোষ। একটি গ্রুপ তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। এর পেছনে যাত্রাবাড়ীর কিছু লোক আছে। এক মাস ধরে এই কারাগারে রয়েছে মিলন। প্রতি সপ্তাহে বৃদ্ধ বয়সে কারাগারে আসা সম্ভব না, গরিব মানুষ টাকা পাবও কোথায়?’
হেনা বেগম জানান, আজ ঈদ। তাই নিজের হাতে গরুর মাংস, ভাত ও ডাল রান্না করে নিয়ে এসেছি। পলিথিনের প্যাকেট মুড়িয়ে ভেতরে খাবার পাঠানোর জন্য তিনি কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন।
মিলনের সঙ্গে কথা বলার পর কারারক্ষীর হাতে তার রান্না করা মাংস দিয়ে আসার পর কথা হয় মা হেনা বেগমের সঙ্গে। হেনা বেগম বলেন, ‘রান্না করা মাংস দিয়ে এলাম, মিলন পাবে কিনা, তা আমি জানি না।’
বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন রাবেয়া নামের এক তরুণী। ছোট বোন, স্বামী ও এক মাস বয়সী সন্তান নিয়ে কারা ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। বাবা আলমগীর হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে পাঁচবার টিকিট কাটলেও তার বাবার সঙ্গে দেখা হয়নি।
রাবেয়া বেগম বলেন, ‘বাবাকে পল্লবী থানার পুলিশ মাদকের মামলা দিয়েছে। দুই মাস ধরে তিনি কারাগারে রয়েছেন।’ পাঁচ বার টিকিট কাটার পরও দেখা করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েন রাবেয়া। বিকাল ৩টার দিকে টিকিট দেওয়া বন্ধ তাই ষষ্ঠবার আর টিকিটও কাটতে পারেননি। বাবার সঙ্গে দেখা না করেই চলে যাবার উদ্যোগ নেন। যাওয়ার সময় সবাই মিলে কারাগারের জানালায় তাকিয়ে প্রিয়জনকে দূর থেকেই দেখার চেষ্টা করেন তারা।
বাবার সঙ্গে সস্তানদের দেখা করিয়ে দিতে মনির হোসেনের স্ত্রী জহুরা বেগম কারাগারে আসেন এদিন। বাড্ডা থানার শিশু নির্যাতন মামলার আসামি মনির হোসেন। একমাস ধরে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বিকেল তিনটার দিকে স্ত্রী জহুরা বেগম তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে আসলেও দেখা করতে পারেননি টিকেট না পাওয়ায়। তাই মন খারাপ করে তারা অপেক্ষাগারে বসে বসেই কাটান অনেক সময়।
জহুরা বেগম বলেন, ‘রান্না ও বাসার কাজ শেষ করে আসতে দেরি হয়েছে। আগামী কাল আবার আসবো আজ তো দেখা করতে পারিনি।’
সাভারের ইপিজেড এলাকা থেকে রুনা বেগম এসেছেন সন্তানদের নিয়ে। কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় তারা কখনও আসেননি। এবারই প্রথম এই কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা তার। স্বামী হান্নান কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। বাসা থেকে নিয়ে আসা রান্না করা খাবার ও নগদ টাকা দিয়েছেন স্বামীকে। তারা খুশী।
কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, ‘কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। বন্দিরা সকালে কারাগারের ভেতরেই ঈদের জামাতে অংশ নেন। বন্দিদের জন্য স্বজনদের আনা খাবারও ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। আগামী দু’দিনও স্বজনরা বন্দিদের জন্য খাবার দিতে পারবেন।’
এদিকে, কাশিমপুর কারাগারেও বন্দিদের জন্য ঈদের বিশেষ আয়োজন রয়েছে। কাশিমপুর কারাগার-২ এর কর্মকর্তারা জানান, সকালে বন্দীদের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্দিদের কিছুটা আনন্দ দেওয়ার জন্য এ প্রয়াস।
এছাড়াও দেশের সব কারাগারে কারা মহাপরিদর্শকের বাণী পাঠ করে শোনানো হয়। জামাত শেষে একে অন্যের সঙ্গে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেন।
কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দিদের ঈদের আনন্দ দিতে কারা অধিদফতর থেকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্দিরা সকাল থেকেই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। কারাগারে সব বন্দিকে একইভাবে মূল্যায়ন করা হয়।’
/এসএমএ/