যেন এক অচেনা ঢাকা!

ঈদে আচেনা ঢাকাঢাকা মানেই ব্যস্ত পথঘাট, ব্যস্ত মানুষ। সবার চোখেমুখে বিরক্তি। হকারদের চিৎকার আর হরদম একটা কিছু বিক্রি করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেতে চায়, এমন কোলাহল। ঢাকা মানেই গন্তব্যে পৌঁছায় অনিশ্চয়তা, জ্যাম।  এই চিরচেনা ঢাকা এখন নেই। ঈদের ক’দিন ঢাকা শান্ত। মোড়ে মোড়ে অচেনা অলস আড্ডা আর কেবল জরুরি সেবাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের কর্মব্যস্ততার শহর। এ যেন অচেনা এক ঢাকা। প্রতি ঈদের মতো এবারও।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়ার সরকারি ছুটির কারণে ঢাকা ফাঁকা হতে শুরু করেছে শুক্রবার থেকেই। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে ফাঁকা ঢাকার স্বাদ পেতে শুরু করে রাজধানীতে অবস্থান করা মানুষেরা। যার যার মতো করে একটু স্বস্তিতেই যেন আছেন তারা। যে দিনমজুর ঢাকায় ঈদ করছেন, তাদের অনেকে কাজে নামলেও পুরো বেলা কাজ করেননি। ফুটপাথেও ঈদের আমেজ ছিল ষোল আনা।

ঈদের সকালে যার যার মতো করে প্রধান ঈদের জামাত ধরতে কেউ হাইকোর্টে গেলেও বেশিরভাগ মানুষ নিজ এলাকায় নামাজ পড়েছেন। ব্যস্ত শহরে অলস দিন যাপনের মধ্যদিয়েই মধ্যবিত্তের ঈদের দিনটি পার করতে দেখা গেছে। সারাদিন রাস্তা ছিল ফাঁকা। সকালে নামাজ পড়ে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা বেশিরভাগ সময় বাসায়তেই কাটিয়েছেন। কিংবা বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে কোনও এক বন্ধুর বাসাতেই একসঙ্গে আড্ডায় সামিল হবেন। তবে দুপুরের পর থেকে শিশু-কিশোরের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মতো। যাদের বেশিরভাগেরই মধ্যেই ছিল স্বস্তি আর অলসতার সুর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণচঞ্চল টিএসসি দুপুর থেকেই ভরে ওঠে কিশোর-কিশোরীদের উচ্ছাসে। শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটিতে গেলেও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এই এলাকাতেই ঘুরতে এসেছেন।

কথা হয় পুরান ঢাকা থেকে আসা সায়েদুর ও তার বন্ধুদের সঙ্গে। নতুন পাঞ্জাবি পরে বন্ধুরা পরস্পরের বাসায় সেমাই মিষ্টি খেয়ে বের হয়ে এসেছেন। সেলফি তুলে আবারও একজনের বাসায় গিয়ে খাবেন দুপুরের খাওয়া।

শুধু আড্ডা আর ঘুরাঘুরিপান্থপথে দেখা গেছে, পুরো ঢাকার মতোই সারি সারি দোকানের সবগুলোই বন্ধ। একটানা দশ বারোটা চায়ের দোকান যেখানে রমরমা থাকে সারাবছর, সেখানে একটি মাত্র দোকান খুলছে বেলা বারোটার দিকে। কয়েকজন যুবক দুপুরের খাওয়ার আগে সেখানে অলস ভঙ্গিতে আড্ডা দিচ্ছেন। গ্রীণরোড এসব ছেলেদের মধ্যে আদনান বলেন, ‘আমরা ঢাকাতেই থাকি, কেবল যানজটের কারণে এক হতে পারি না। ঈদের দিনের জন্যই অপেক্ষা করি। আজ সারাদিন আড্ডা আর আড্ডা চালিয়ে যাবো।

অলস আড্ডা মেতেছে ওরাঢাকার রাস্তায় রিকশায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোটাই একটা যেন আলাদা আনন্দ। ভাড়া একটু চড়া হলেও সেটিকে পাত্তা না দিয়ে বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার শহর এখন ঢাকা। ফেসবুক লাইভে অভিনেত্রী জয়া আহসান বলেন, ‘ঢাকা এ সময় এমন ফাঁকা হয়ে যায় যে,রিক্সায় ঘুরে বেড়ানোটা আমি মিস করতেই চাই না। ঘন্টা হিসেবে রিকশা ভাড়া করে বেরিয়ে গেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাহেদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে এতো রকমের হাঙ্গামা থাকে যে, ভুলেই যাই ঢাকা কত সুন্দর একটা শহর। আজ বের হয়েছি পুরান ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। শুধু ঘুরবো, ছবি তুলবো।

/এসএমএ/