যাত্রী ফেলে পাইলটরা শপিংয়ে গিয়েছিলেন কিনা, তদন্ত করছে বিমান

বিমান বাংলাদেশব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে যাত্রীরা উঠলেও দুই পাইলট দেরিতে পৌঁছেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শপিং করতে গিয়ে এই দুই পাইলট দেরি করেছিলেন বলে অভিযোগ পেয়ে এর সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রায় ২৩ দিন আগে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। ওই সময় উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন বন্ধ থাকলেও চালু ছিল অক্সিলারি পাওয়ার ইউনিট (এপিইউ)। ফ্লাইটে উঠে নিজ নিজ আসনে বসছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু তখনও ক্যাপ্টেন ও কো-পাইলট ফ্লাইটে উপস্থিত না হওয়ায় বিষয়টি নজরে আসে ওই ফ্লাইটের যাত্রী বাংলাদেশে এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপের (এএআইজি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহর। তিনি ওই ফ্লাইটে থাকা অপর যাত্রী বিমানের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের চিফ শোয়েব চৌধুরীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। এরপরই বিষয়টি বিমান কর্তৃপক্ষ অবহিত হয়।

সূত্র আরও জানায়, ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন ও কো-পাইলট সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপে কেনাকাটা করতে গিয়েই দেরি করে ফেরেন উড়োজাহাজে। ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন আমিন, তবে কো-পাইলটের নাম জানা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে এএআইজি প্রধান ক্যাপ্টেন  সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘আমি ব্যাংকক থেকে ট্রেনিং শেষ করে সেই ফ্লাইটে দেশে ফিরছিলাম। ফ্লাইটটিতে বিমানের ফ্লাইট সেফটি বিভাগের চিফ অব সেফটিও উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় পাইলট বিমানের ম্যানুয়াল অনুযায়ী দেরি করে ফিরতে পারেন কিনা, সেটা আমি খতিয়ে দেখতে বলেছি। ম্যানুয়াল অনুয়ায়ী তারা অপরাধ করে থাকলে বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যাপারে বিধিমতো ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে ব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাইলটের দেরি করা কিংবা ফ্লাইটে পাইলট না থাকার মতো কোনও ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে ঘটেনি। তবে প্রায় ১৫ দিন আগে ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি মেইল পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে, একটি ফ্লাইটে এমন ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু আমার জানামতে সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে পাইলটের কারণে কোনও দুর্ঘটনা বা সমস্যা হয়নি। সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও বিমানের কোনও পাইলটের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়নি।’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পাইলটরা দীর্ঘ সময় বসে ফ্লাই করেন। এ কারণে অনেক সময়ে উড়োজাহাজের আশেপাশে একটু হাঁটাহাঁটি করেন। কেউ কেউ বিমানবন্দর শপে শপিংও করতে যান। অনেক সময়ে আমাদের সঙ্গেও কথা বলতে আসেন। কিন্তু পাইলটের কারণে সমস্যা হওয়ার কোনও ঘটনা ঘটেনি। কখনও কোনও সমস্যা হলে আমরাই লগ বইয়ে তা লিপিবদ্ধ করে বিমানের প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করি।’

বিমানের ম্যানেজার (ফ্লাইট সেফটি) মজিবুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় চিফ অব টিকনিক্যাল ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাইলটের কোনও অপরাধ থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশন অথরিটির পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) চৌধুরী এম  জিয়াউল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ঘটনাটি বিমানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফ্লাইট সেফটির কোনও বিষয় নয়। সিভিল এভিয়েশন থেকে ফ্লাইট সেফটি ইস্যুগুলো দেখা হয়। পাইলট কখন ফ্লাইটে উঠবেন ও কখন অফিস করবেন, সেটা এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার বিষয়। বিমান এ ঘটনার তদন্ত করছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

/সিএ/টিআর/এপিএইচ/