যা থাকছে দক্ষিণ সিটির বাজেটে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনআয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও আগেরবারের তুলনায় বাড়ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাজেট। আরও সাড়ে ৮২ কোটি টাকা বাড়িয়ে সংস্থাটি প্রস্তুত করেছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট। এরই মধ্যে ৩ হাজার ২৬৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার খসড়া বাজেট চূড়ান্ত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে ডিএসসিসি’র প্রতিটি বিভাগের সমন্বয়ে ৩ হাজার ২৪১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার খসড়া বাজেট পাঠানো হয়। তিনি এর বেশকিছু খাতে পরিবর্তন আনেন। যুক্ত করেন নতুন দুটি খাত।
ডিএসসিসির প্রস্তাবিত বাজেটের ওই খসড়াটি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে রয়েছে। তবে এ প্রতিবেদন প্রকাশের পরও এ খসড়া বাজেটে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। কারণ এখনও ডিএসসিসির হাতে তিন দিন আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটের প্রথম খসড়ায় রাজস্ব আয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। পরে মেয়র এতে কিছু পরিবর্তন করে ১ হাজার ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকা করেন। এছাড়া বাজেটে অন্যান্য আয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরে ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
অন্যদিকে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৭০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

রাজস্ব ব্যয়সহ অন্যান্য ও উন্নয়ন ব্যয়ের বিবরণীতে দেখা গেছে— বেতন ভাতায় ২৫০ কোটি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পানি ও গ্যাসে ১৫৪ কোটি; মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ৩২ কোটি ২৫ লাখ, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম (মনিটরিং/সার্ভাইলেন্সসহ) ২৬ কোটি ৮০ লাখ; সরবরাহে (কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার) ৩২ কোটি ৩৯ লাখ; ভাড়া, রেটস ও করে ৮ কোটি; কল্যাণমূলক ব্যয়ে ১৯ কোটি ৭০ লাখ; ভ্রমণ ও যাতায়াতে ৫ লাখ; ডাক, তার ও দূরালাপনীতে ২০ লাখ; আতিথেয়তায় ১ কোটি ৫০ লাখ; সুদে ১ কোটি; বিজ্ঞাপন ও প্রচারণায় ১১ কোটি ৫০ লাখ; ফিস খাতে ৫৭ কোটি ২০ লাখ টাকা; প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সংস্থার চাঁদায় ৩ কোটি ৫০ লাখ; বীমা খাতে ১ কোটি ১০ লাখ; নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০ কোটি ৭০ লাখ; উচ্ছেদ কার্যক্রমে ৫০ লাখ ও নগর ডিজিটাল সেন্টারে ১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

সব মিলিয়ে এসব খাতে ব্যয় করা হবে ৬১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭)এক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ৪৭৮ কোটি ১৫ লাখ, যা সংশোধিত বাজেটে এসে দাঁড়ায় ৪৩০ কোটি ১১ লাখে।

অন্যদিকে উন্নয়ন ব্যয়ের বিবরণীতে দেখা গেছে— সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ১ হাজার ১২১ কোটি ৫১ লাখ; কবরস্থান/শ্মশানঘাট সংস্কার ও উন্নয়নে ৯ কোটি টাকা; নাগরিক বিনোদনমূলক সুবিধাদি উন্নয়নে ১৫০ কোটি ৪৯ টাকা; ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ৩৮৮ কোটি ৬০ লাখ; পরিবেশ উন্নয়নে ১৭৬ কোটি ৪১ লাখ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস নির্মাণে ১০ কোটি; ঢাকা নগর জাদুঘরে ৩ কোটি; বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে (মেয়রের জন্য নির্ধারিত) ২৫ কোটি; অপ্রত্যাশিত উন্নয়ন ব্যয় (মেয়রের জন্য নির্ধারিত) ২৫ কোটি; সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি ও সম্পদ ক্রয়ে ৬৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা (প্রাথমিক খসড়ায় ছিল ৬৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা)।

সব মিলিয়ে এসব খাতে ব্যয় করা হবে ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ছিল ২ হাজার ৫৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ১৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকায়। এর মধ্যে নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খাত ও প্রকল্প তহবিল থেকে অনুমোদিত রাজস্ব খাতে কোনও ব্যয় ধরা হয়নি।

বাজেটের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে অন্য একটি প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৪ জুলাই বাজেট ঘোষণার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার এর আকার কিছুটা বাড়তে পারে।’

প্রস্তাবিত বাজেটের খসড়ায় দেখা গেছে, গত অর্থবছরে (২০১৬-১৭) বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিন্তু এ খাতে আয় হয়েছে মাত্র ৫১৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে সরকারি ও বৈদেশিক উৎস থেকে আয় ধরা হয় ১ হাজার ৭০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কিন্তু আয় এসেছে ১ হাজার ১৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকা।

পুরো বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাজেটের মাত্র ৫৬ দশমিক ১৯ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। গত অর্থবছরে অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা বেশি বাস্তবায়ন করতে পারলেও পরিবর্তন না হলে চলতি অর্থবছরে ৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে বাজেট ঘোষণা করা হচ্ছে।

বাজেট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মাহবুব উল হোসেন খান কিছুই বলতে রাজি হননি।

/জেএইচ/