কোর্ট ইউএনওকে হাজত দিয়েছিলেন: অ্যাডভোকেট সাজু (অডিও)

 

ওবায়দুল্লাহ সাজুবরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুরের কথা বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অস্বীকার করলেও মামলার বাদী অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বিচারক তাকে হাজত দিয়েছিলেন।’ আর মামলার বিবাদী ইউএনও তারিকও বরগুনার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত চিঠিতে বলেছেন, ‘প্রথমে আদালত আমার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমি দুই ঘণ্টা কোর্ট হাজতে আটক ছিলাম।’

তারিক বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আমন্ত্রণপত্র ছাপানোয় ছবি বিকৃতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মানহানি এবং ক্ষতিপূরণের মামলা হয় ৭ জুন বরিশালের আদালতে। সমন জারির পর তিনি ১৯ জুলাই   বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  মো. আলী হোসাইনের আদালতে হাজির হন। গাজী তারিক সালমন বরগুনার জেলা প্রশাসককে লেখা চিঠিতে জানান,‘ বিচারক আধাঘণ্টা উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনেন। আমার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পঠানোর নির্দেশ দেন এবং মামলার শুনানির জন্য ২৩.০৭.২০১৭ তারিখ ধার্য করেন। এরপর প্রায় দু’ঘণ্টা আমাকে কোর্ট হাজতে আটকে রাখা হয়। পুলিশ সদস্যরা বারবার আমাকে কারাগারে যেতে অনুরোধ করলেও আমি তা অগ্রাহ্য করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। দুপুর দু’টার দিকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  মো. আলী হোসাইন তার পেশকার মারফত আমাকে আইনজীবীসহ তলব করেন। উপস্থিত হওয়ার পর আমার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে মর্মে পেশকার মারফত জানান। এরপর আমি মুক্ত হই।’

এদিকে এই ঘটনায় রবিবার সুপ্রিমকোর্টে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার ব্যাখ্যায় বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট  মো. আলী হোসাইন ইউএনও’র জামিন নামঞ্জুর করার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন,‘মানহানির মামলায় বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের জামিন আবেদনের শুনানির সময় জনসাধারণের রোষানল থেকে রক্ষা করতে এবং তার পক্ষের আইনজীবীর নিবেদন মোতাবেক ‘কাগজজাত দাখিল করতে’ সময় দিতেই জামিন শুনানি স্থগিত করা হয়েছিল। জামিন আবেদন ‘একটিবারের জন্যও নামঞ্জুর করা হয়নি।’ ফলে (ইউএনওকে) জেল হাজতে প্রেরণের কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সিএমএম স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে বলা আছে, ‘আমার এই আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ কারও প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে, বা কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে না করে সম্পূর্ণ বিচারিক মনোভাব প্রয়োগ করে সৎ বিশ্বাসে গ্রহণ করেছি।’

বরগুনার জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া তারিক সালমনের রিপোর্টতবে ঘটনার পরদিন ২০ জুলাই মামলার বাদী এবং বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ সাজু বাংলা ট্রিবিউনকে টেলিফোনে বলেন,‘আমরা মামলা করেছি। কোর্ট সমন দিয়েছে। উনি (ইউএনও) হাজির হয়েছেন। সেকশন জামিনযোগ্য। এখন কোর্ট কী বুঝে তাকে হাজত দিলো, আবার কী বুঝে তাকে জামিন দিলো এটা কোর্টের ব্যাপার। কোর্ট ওনাকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমরা বলেছিলাম এই যে ছবি আঁকালেন, দিলেন এর কোনও রেজ্যুলেশন আছে কিনা। উনি কোনও রেজ্যুলেশন দেখাতে পারেন নাই। তাই কোর্ট তাকে হাজত দিয়ে পরবর্তী দিন রেখেছিল ২৩ তারিখ।’

এদিকে বরিশালের সদ্য প্রত্যাহার হওয়া জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান ২১ জুলাই তার ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে জানান,‘ ‘আমি একটি এসএমএস-এর মাধ্যমে জামিন নামঞ্জুরের খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জামিনের ব্যবস্থা করি।’

আদালতের একটি  দায়িত্বশীল সূত্র জানায়,‘কোর্টের আদেশ দুই ধরনের। মৌখিক এবং লিখিত। মৌখিক আদেশের ভিত্তিতে পরে লিখিত আদেশ দেওয়া হয়।মৌখিক আদেশের কোনও ডকুমেন্ট থাকে না। পরে তা লিখিত আদেশ আকারে দেওয়া হয়। সাধারণত জামিন নামঞ্জুর অথবা জামিন উভয় ধরনের আদেশই প্রথমে মৌখিক আদেশ থাকে। পরে তা লিখিত আদেশে পরিণত হয়।’

/এপিএইচ/