বৃহস্পতিবার সকালে চেন্নাই যাচ্ছেন সিদ্দিকুর

মঙ্গলবার আহত সিদ্দিকুরকে দেখতে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম

চোখের উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে চেন্নাইয়ের পথে রওনা দেবেন সিদ্দিকুর রহমান। সেখানকার শংকর নেত্রালয়ে শুক্রবার সকালে তার চোখের অপারেশন হবে। মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) বিকালে সিদ্দিকুরকে দেখতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কেবিনে পৌঁছালে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা মন্ত্রীকে এসব তথ্য অবহিত করেন। তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারি খরচে চেন্নাই পাঠানো হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্দিকুরের কেবিনে পৌঁছানোর পর তার সার্বিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি কেবিনে উপস্থিত সিদ্দিকুরের স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেন। সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মোস্তফা তাকে জানান, চেন্নাই যাত্রায় সিদ্দিকুরের সঙ্গে থাকবেন ইনস্টিটিউটের একজন সহযোগী অধ্যাপক।

সিদ্দিকুরের কেবিনে কেবিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী পৌঁছালে বেডে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসেন সিদ্দিকুর রহমান। এসময় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘আমার তিন বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। ছাগল-মুরগি পালন করে মা আমাকে বড় করেছেন। আমার বড় ভাই রাজমিস্ত্রি। তারা খুব কষ্ট করেছেন আমাকে বড় করতে। আমি তিতুমীর কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ফলে প্রথম হয়েছি। ইচ্ছা ছিল বিসিএস দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হবো। এ জন্য কোচিংয়েও ভর্তি হয়েছিলাম। ওইদিনও আমার ইংরেজি কোচিংয়েই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার বদলে আমাকে হাসপাতালে আসতে হলো।’ তিনি মন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন, ‘আমাকে সুযোগ করে দেন যেন মাকে নিয়ে নিরাপদে বাঁচতে পারি।’

মঙ্গলবার আহত সিদ্দিকুরকে দেখতে চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এসময় পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন সিদ্দিকুরের মা ও ভাই

সিদ্দিকুরের আবেগঘন কথায় কান্না ধরে রাখতে পারেননি কেবিনে উপস্থিত তার মা সুলেমা খাতুন ও বড় ভাই নায়েব আলী। মন্ত্রী তাদের উপস্থিতি জানতে পেরে তাদের সঙ্গেও কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, ‘চিন্তা করবেন না, সিদ্দিকুরের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়া হবে। কোনও অসুবিধা হবে না।’ সিদ্দিকুরের আকুতিতে সাড়া দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘চিন্তা কোরো না, সুস্থ হয়ে ফিরে আসো। তোমার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেবো।’

সিদ্দিকুরের কেবিন থেকে বেরিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই সিদ্দিকুরকে চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে সিদ্দিকুরের সব ধরনের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে সরকার।’
এসময় সাংবাদিকরা বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সঙ্গে থাকা ওই দিনের ভিডিও ফুটেজের কথা উল্লেখ করেন। এই ভিডিও ফুটেজে পুলিশকে ছাত্রদের টার্গেট করে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে দেখা যায়। সাংবাদিকরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের আইজি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে অতি উৎসাহে কেউ এ কাজ করেছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঘটনা যাই ঘটুক, এই ছেলেটি (সিদ্দিকুর) নিরীহ। তাই আমাদের প্রথম কাজ তাকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা। আমরা সেটাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে করছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী সিদ্দিকুরকে চেন্নাই পাঠানো হচ্ছে। আমরা আশা করছি, সে দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরবে।’

উল্লেখ্য, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই সকাল ১০টার দিকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে অবস্থান নেন নতুন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। পুলিশ তাদের ওই জায়গা ছেড়ে যেতে বললে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফুট ওভারব্রিজের পাশের অংশে অবস্থান নেন তারা। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান। এরপর থেকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।

আরও পড়ুন-

‘বাম চোখে আলো ফিরবে সিদ্দিকুরের’

‘আমার পুতরে থুইয়া বাড়িত যাইতাম না’
সিদ্দিকুরকে পাঠানো হচ্ছে চেন্নাইয়ের ‘শংকর নেত্রালয়ে’

ভিডিওতে খুব কাছ থেকে ছাত্রদের টার্গেট করে পুলিশি হামলার দৃশ্য

/জেএ/টিআর/টিএন/