হাতিরঝিলের স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় ডুবেছিল ধানমন্ডি-কলাবাগান

ধানমন্ডিতে জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে মেয়র সাঈদ খোকনদু’দিনের টানা বৃষ্টিতে রাজধানী জুড়ে তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে পুরো নগরবাসীকে জলজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তবে বুধবার দুপুরের দিকে বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর অধিকাংশ স্থান থেকে পানি নেমে গেলেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, কাঠালবাগান, পান্থপথ ও কাওরানবাজার এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকার পানি সিটি করপোরেশনের পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে সোনারগাঁও সংলগ্ন স্লুইস গেট দিয়ে হাতিরঝিলে প্রবাহিত হয়। কিন্তু বুধবার এ গেটটি বন্ধ ছিল। যে কারণে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ভয়াবহ দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বুধবার ঢাকায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মতে, এ পরিমাণ বৃষ্টি হলে যে জলাবদ্ধতা হয় তা খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী নয়। বৃষ্টি শেষ হওয়ার মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার মথায় পানি অপসারণ হয়ে যায়। কিন্তু বুধবারের বৃষ্টি ধানমন্ডি, কলাবাগান, পান্থপথ, কাঁঠাল বাগান, কারওয়ানবাজার, টিসিবি মোড়সহ আশপাশের এলাকাকে ভাসিয়ে দেয়। পুরো এলাকা যেনও ছোট-খাট নদীতে পরিণত হয়।

‘হঠাৎ’ করে এলাকার এমন পরিস্থিতির কথা শুনে ঘটনাস্থলে আসেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকও তার করপোরেশন এলাকা কাওরানবাজার পরিদর্শনে আসেন। দুজনই এই এলাকার জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসা, হাতিরঝিল প্রকল্প ও কাওরানবাজার সংলগ্ন ফ্লাইওভারকে দায়ী করেন।

হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ঢাকায় প্রায় একশ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টি হওয়ার পর নগরীর পানি নেমে যাওয়ার জন্য যে ধরনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকার দরকার ছিল তেমনটি নেই। তাছাড়া বৃষ্টি হলে ঢাকা ওয়াসার লোকজনকে মাঠে পাওয়া যায় না। তাদের অধিকাংশ ড্রেন বিকল। এ জন্য জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে। বৃষ্টি থামার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে যাবে।” কিন্তু মেয়রের এমন ঘোষণার পরেও পুরো এলাকায় পানি নামেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যখন দেখেছি বৃষ্টির পানিতে পুরো ঢাকা থই থই করছে তখন মেয়র সাঈদ খোকনসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। ধানমন্ডি রাপা প্লাজা এলাকায় গিয়ে দেখি ভয়াবহ পানি। যেটা কখনও এমন ছিল না। আমরা প্রথম অবস্থায় মনে করেছিলাম অন্যান্য দিনের মতো পানি নেমে যাবে। পরে জানতে পানি পান্থকুঞ্জ সংলগ্ন হাতিরঝিলের স্লুইস গেটটি বন্ধ ছিল। যে কারণে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরে সকালে গেটটি খুলে দেওয়ার পর পানি দ্রুত নেমে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই কথা জানান, হাতিরঝিল সংলগ্ন পান্থকুঞ্জে স্থাপিত হাতিরঝিলের নতুন স্লুইস গেটের এমন নির্মাণ শ্রমিক।

সচিবালয়ে জলাবদ্ধতাডিএসসিসির এই প্রকৌশলীর মতে- হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ পানি নিষ্কাশনে বাধা। হাতিরঝিলের সঙ্গে আশপাশের ড্রেনের যে সংযোগ রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। একটি স্লুইসগেটে মাত্র তিনটি মুখ রয়েছে। বৃষ্টিতে যখন পানি বাড়ে তখন এ তিনটি মুখে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে পুরো এলাকায জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

তিনি জানান, স্লুইসগেটে পানির ময়লা আবর্জনা অপসারণ করার জন্য একটি আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। ময়লাগুলো সরিয়ে নেওয়ার পর পানি ঝিলে গিয়ে পড়ে। এই দীর্ঘ পরিক্রমণের কারণে ড্রেনে পানির যে গতি থাকে তা আবার উল্টো পেছন দিকে চলে যায়। ফলে বেশি বৃষ্টি হলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।

এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক জামাল আক্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে তিনি কথা বলতে চাননি।

/এসএস/টিএন/