ঈদে বাড়ি ফিরতে মরিয়া নগরবাসী, মিলছে না টিকিট

দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না ঈদযাত্রার টিকিটরেল ও বাসের অগ্রিম ঈদ টিকিট পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন রাজধানীবাসী। আগের কয়েকদিনের মতো তাই মঙ্গলবারেও (২২ আগস্ট) রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনাল পরিণত হয়েছিল টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীদের জনসমুদ্রে। বিশেষ করে এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে আগাম টিকিট বিক্রির শেষ দিন হওয়ায় যাত্রীদের চাপ ছিল একটু বেশিই। তবে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত টিকিট না থাকায় ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কা কাটেনি নগরবাসীর।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে টিকিট প্রত্যাশীদের উপস্থিতি পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। কাউন্টারে সামনে শুরু হওয়া লাইন কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, তা খুঁজে বের করা রীতিমতো দুঃসাধ্য। যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারাও বলতে পারছেন না ঠিক কত নম্বর কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এমন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও কাউকে কাউকে ফিরে যেতে হয়েছে খালি হাতে।
স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের তুলনায় মঙ্গলবার যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খেতে কর্মকর্তাদের। শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার ও পুলিশ সদস্যরাও পারছিলেন না যাত্রীদের চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আনসার সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ভিড় কিভাবে সামলাই? কেউ কারও কথা শুনছেন না। সবাই চান আগে টিকিট নিতে।’
যাত্রাবাড়ি থেকে সকালেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ওসমান গণি। রংপুরের ট্রেনের টিকিট চান তিনি। ওসমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবারের আট সদস্যের জন্য টিকিট নিতে ছেলেসহ সেই ভোরে লাইনে দাঁড়িয়েছি। বেলা সাড়ে ১১টা বাজে। সামনে এখনও অনেক মানুষ। কখন টিকিট পাই বলতে পারছি না।’ শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফিরতে হয় কিনা, তা নিয়েই আশঙ্কা করছেন বলে জানান তিনি।
কমলাপুর যেন জনসমুদ্রএদিকে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বুধবার (২৩ আগস্ট) ১ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে বলে জানালেন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্ত্তী। তিনি বলেন, ‘এ কয়েকদিনের মতো আগামীকালও (বুধবার) স্বাভাবিক নিয়মে টিকিট দেওয়া হবে।’ তিনি জানান, মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছে ৩১ আগস্টের টিকিট। ২৩টি কাউন্টারে বিক্রি হয় এসব টিকিট। এর মধ্যে দুইটি কাউন্টার নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল।
স্টেশন সূত্রে জানা যায়, ঈদের পরের ফিরতি অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৫ আগস্ট থেকে। শুরুর দিন পাওয়া যাবে ৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট বিক্রি হবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। এছাড়া, ঈদকে সামনে রেখে সাত জোড়া বিশেষ ট্রেন দেওয়া হবে। ট্রেনগুলো ঈদের আগের চার দিন ও পরের সাত দিন চলবে।
কমলাপুরের মতো একই চিত্র ছিল বাস টার্মিনালগুলোতেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাবতলী, শ্যামলী ও মহাখালী টার্মিনালসহ বাসের প্রায় সব কাউন্টারের টিকিটই শেষ হয়ে গেছে। ফলে কাউন্টার থেকে কাউন্টারে ঘুরলেও মিলছে না টিকিট। তবে যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করছেন, অধিকাংশ কাউন্টারের লোকজন নিজেরে ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দিয়ে ঈদযাত্রার আগ মুহূর্তে যোগাযোগ করতে বলছেন। কাউন্টারের লোকজন টিকিট রেখে দিয়ে যাত্রীদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। তারা বলছেন, এসব টিকিট ঈদযাত্রার আগে আগে বেশি দামে বিক্রি করবে বলেই কাউন্টারে টিকিটের সংকট চলছে।
অগ্রিম টিকিটের জন্য মিরপুর থেকে আসা যাত্রী আবুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নওগাঁয় যেতে ৩০ তারিখের একটি টিকিটের জন্য খোঁজ করছিলাম। কিন্তু ডিপজল কাউন্টারের লোকজন বলছে কোনও টিকিট নেই। পরে যখন চলে আসছি তখন কাউন্টারের একজন ডেকে নিয়ে ঈদের আগে যোগাযোগ করতে বললেন।’ আবুল হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘টিকিট যদি না থাকে, তাহলে ঈদের আগে যোগাযোগ করেই বা লাভ কী? নিশ্চয় এরা টিকিট আটকে রেখে এখন আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।’
আরও পড়ুন-


সংসদের ১৭তম অধিবেশন ১০ সেপ্টেম্বর

২৬ আগস্টের পর হজযাত্রী বহনে অতিরিক্ত ফ্লাইটের অনুমতি পায়নি বিমান