জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈদের আগের পরীক্ষা স্থগিতের দাবি বানভাসি এলাকার শিক্ষার্থীদের

ফেসবুক থেকে নেওয়া স্ট্যাটাস‘হামা উত্তরবঙ্গের বানভাসি মানসি বাহে বাঁচলেও কিছু হয় না, মরিলেও কিছু হয় না,খাইলেও কিছু হয় না,না খাইলেও কিছু হয় না। চোখের সামনে সউগ ভাসি গেইল বাহে আর তোমরা কনছেন বন্যা হয় নাই।’ সামাজেক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উত্তরবঙ্গের বানভাসি এক শিক্ষার্থী এভাবেই লিখেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন,‘বন্যা কবলিত উত্তরবঙ্গের মানুষ যখন বেঁচে থাকা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে,ঠিক এই মুহূর্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করলো তাদের পূর্বঘোষিত রুটিন অনুযায়ী ২০১৬ সালের চতুর্থ বর্ষের অনার্স পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে আজ বুধবার (২৩ আগস্ট) আগামী শনিবার (২৬ আগস্ট) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষ যেখানে বেঁচে থাকা নিয়েই সংগ্রাম করছেন, সেখানে পরীক্ষা দেবে কিভাবে? তাই আমরা অন্তত ঈদের আগের এই পরীক্ষা দুটি স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি।’

ওই শিক্ষার্থী আরও লিখেছেন,‘উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ মানুষসহ দেশের অর্ধকোটিরও বেশি মানুষ আজ বন্যায় দিশেহারা। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় এখন খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই,চাল নাই,ডাল নেই,ওষুধ নেই, শুধু নাই আর নাই। আছে শুধু মানুষ ও গরু-ছাগল একসঙ্গে মরে থাকা পঁচা পানি। যেগুলো এখন পান করে ডায়রিয়া,কলেরাসহ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগ মহামারি আকারে দেখা দেবে। মানুষ যখন শুধু বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে ঠিক এই সময়ে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে বন্যা কবলিত মানুষদেরকে নিয়ে তামাশা করতে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টির আগ্রাসী মনোভাব দেখে শঙ্কিত।’

নেত্রকোনাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলর জেলা রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও দিনাজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনও কোনও অঞ্চল থেকে পানি কিছুটা নেমে গেলেও বন্যা পরবর্তী সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানি নেই,খাবার নেই,রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই।

ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এ বিষয়ে জানতে কথা হয় দিনাজপুরের সদর উপজেলার বেংকালী গ্রামের শিক্ষার্থী জুবায়েরের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবউনকে বলেন,‘আমি ফুলবাড়ী সরকারি কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। একটু পরেই পরীক্ষা দিতে যাবো। আমাদের কলেজ পানিতে না ডুবলেও আমাদের গ্রামের বাড়ি বেংকলী পানির নিচে। পড়াশোনার সুবাদে ফুলবাড়িতে মেসে থাকলেও পানিতে যখন শুনেছি আমাদের বাড়িঘর ডুবে গেছে তখন কি আর পড়তে পেরেছি? গ্রামে গিয়ে বাড়ি ঘর,গরু-ছাগলের জীবন রক্ষার কাজে ছিলাম। বাড়িতে এখনও বাবা-মা অনেক কষ্ট করছে। কিন্তু এসব চিন্তার পরও কি আমার পরীক্ষা ভালো হবে? জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত পরীক্ষা স্থগিত করা।’

পরীক্ষা স্থগিতের কোনও সম্ভবনা আছে নাকি জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বন্যা হয়েছে একদম রিমোর্ট অঞ্চলে। কিন্তু সরকারি কলেজ তো সবই জেলা ও উপজেলা শহরে। ফলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া ওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা তো এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। জানালে আমরা অবশ্যই মানবিক ব্যাপারটি ভেবে দেখতাম। কারণ,ইতোমধ্যে ডিগ্রি পরীক্ষা তো স্থগিত করেছি।’

তিনি আরও বলেন,‘পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার আগে ওই অঞ্চলের সবগুলো জেলা প্রশাসকেরে কাছে ফোন করে জেনেছি বন্যা পর পরিস্থিত কি? তারা পজিটিভ জবাব দিয়েছে বলেই তো পরীক্ষা স্থগিত করা হয়নি। তবে গতকাল (মঙ্গলবার) আমার কাছে ওই অঞ্চলের এক শিক্ষার্থী মেইল করেছে পরীক্ষা স্থগিতের জন্য। সেটা আমি ভিসি স্যারকে দিয়েছি। কিন্তু পরীক্ষা তো আজ, গতকাল আবেদন পেলে তো কিছু করার থাকে না। তবে ২৬ তারিখ আরও একটা পরীক্ষা আছে। শিক্ষার্থীরা যদি স্থগিত চায় তাহলে অবশ্যই কলেজ কতৃপক্ষের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে হবে। আমরা ভেবে দেখবো।’