ছাত্রলীগের কাছে এলে মনে হয় মন খুলে কথা বলি: শেখ হাসিনা

ছাত্রলীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ছবি: ফোকাস বাংলা)
ছাত্রলীগকে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শিক্ষাটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগ থেকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব আসতে হবে। তার জন্য শিক্ষা একান্তভাবে দরকার।  ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি কর্মীকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে এ দেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে পারবো।’ ছাত্রলীগের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাছে এলে মনে হয় মন খুলে কথা বলি। কারণ আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সামান্য সদস্য ছিলাম। একজন কর্মী থেকে সব সময় রাজপথের সংগ্রামে ছিলাম। বলতে গেলে এটাই হচ্ছে মূল সংগঠন যার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক হয়েছে।’

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন।

জাতির জনকের আদর্শ নিয়ে সবাইকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দেশ এগিয়ে যাবে।’

শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে শিক্ষিত নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এসময় বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অশিক্ষিত নেতৃত্ব দায়িত্ব পেলে দেশের কী সর্বনাশ হতে পারে তা তো আমরা দেখেছি। তারা মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে, লুটপাট করতে পারে, দুর্নীতি করতে পারে, মানি লন্ডারিং করতে পারে। নিজেদের বিত্ত বৈভব গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু দেশের মানুষকে কিছু দিতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘শান্তি ছাড়া কখনও প্রগতি আসে না। আমরা এটাই চাই আমাদের দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকবে। আমরা ধীরে ধীরে দেশকে প্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কোনও দুর্যোগ দুর্বিপাক হয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সবাইকে উদ্বুদ্ধ করি। দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে, তাদের সেবা করতে। মানবতার কাজ করতে। এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এই আদর্শ নিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সন্ত্রাস-খুন-জঙ্গিবাদ কায়েম করা হয়েছিল। খুনিদের মদদ জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া সবাই দিয়েছে। তাদের সংসদে বসিয়েছে। তাদের নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। এসব করেছে আমাকে আঘাত দেওয়ার জন্য। আমি যাতে ভেঙে পড়ি সেই জন্য। কিন্তু আমি কোন বাবার মেয়ে কোন মায়ের মেয়ে সেটা তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। বাবা ও মা’র কাছ থেকে দেশকে ভালোবাসার, দেশের কল্যাণে কাজ করার, দেশের জন্য যে কোনও ত্যাগ স্বীকার করার শিক্ষা পেয়েছি। শিক্ষা পেয়েছি যেকোনও ঝুঁকি নেওয়ার মতো সাহস রাখার। তাই প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে আজ আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার সরকার গঠন করেছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যখন একটু ভালো কাজ হয়, মানুষজন ভালো থাকে, বার বার এটাই মনে হয় আমার বাবা-মার আত্মা নিশ্চয়ই শান্তি পাবে। এটা ভেবে যে তার গরীব মানুষেরা একটু ভালো আছে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার পরিবারের কেউ ক্ষমতায় আসবে এই চিন্তা তো তারা (হত্যাকারীরা) করেনি। তারা তো এটা চায়ওনি। এজন্য তারা ১৫ আগস্ট আমার বাবা-মা-ভাইসহ সবাইকে হত্যা করে। একই সঙ্গে ৩টি বাড়িতে আক্রমণ করে ওই হত্যাযজ্ঞ তারা ঘটায়। যেন ওই রক্তের কেউ না থাকে। আমরা দুই বোন ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল যে বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে যাই।’

২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘পুড়িয়ে পুড়িয়ে এদেশের মানুষকে মারা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা হয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে, এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে- সেটা কোনোদিন ভাবতে পারিনি। এটা নাকি তাদের রাজনীতি।’

 

আরও পড়ুন- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চিন্তা এখনও পিছু ছাড়ছে না আ. লীগের