‘রোহিঙ্গাদের সুবিধা নিশ্চিত না হলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বদলে যাবে’

জোনায়েদ সাকিগণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্ত কিছুর নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ নিশ্চয়তা না দিতে পারলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বদলে যাবে। এটা তখন সরকার আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কাজেই সরকারকে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, মিয়ানমার কার্যত বাংলাদেশের ওপর হামলা করছে।’

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা বন্ধ ও মিয়ানমারে তাদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশে করে গণসংহতি আন্দোলন।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার প্রথমদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বয়ানকে সমর্থন দিয়ে যৌথ অভিযানের কথা বলে আসছিল। কিন্তু জনগণের চাপে পরে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের সব সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এটা যেন মুখের কথা না হয়। যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকারসহ ফেরত না দেওয়া যাচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ভারত, চীন ও রাশিয়া তাদের সংকীর্ণ স্বার্থে মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে তেল, গ্যাসসহ অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। সেখানে ওইসব দেশ বিনিয়োগ করছে। এজন্য তারা নিজের স্বার্থে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, গণহত্যা ও শরণার্থীর স্রোত যদি অব্যাহত থাকে তাহলে এ অঞ্চল স্থিতিশীল থাকবে না। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হলে তখন বিনিয়োগ এত সহজ হবে না। তাই বলতে চাই, সংকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগ করে মিয়ানমারকে চাপ দিন এ গণহত্যা বন্ধ করতে।  

৫০ বছর ধরে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় গণহত্যা চলছে অভিযোগ করে জোনায়েদ সাকি বলেন,‘এ গণহত্যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে, মিয়ানমার এ গণহত্যাকে আড়াল করতে বিভিন্ন চেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য তারা একটা বয়ান তৈরি করেছে। রোহিঙ্গারা নাকি জঙ্গি! কোনও সংবাদসংস্থাকে সেখানে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। জাতিসংঘকে এটাকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।’

এ সময় মিয়ানমার থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কার্যত মিয়ানমার যখন বাংলাদেশের ওপর হামলা করেছে, তখন তাদের কাছ থেকে চাল আমদানি কোনোভাবে চলতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চালের সংকট সরকারই তৈরি করেছে। হাওরের বন্যার পর থেকে আমরা বলে আসছি চালের সংকট হতে পারে। আপনারা প্রস্তুতি নিন। কিন্তু সরকার কোনও প্রস্তুতি নেয়নি। বরং, মানুষের দুর্ভোগকে পুঁজি করে কিভাবে টাকা কামানো যায় তার সমস্ত ব্যবস্থা করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কতিপয় গোষ্ঠী আপনাদের দলের সঙ্গে যুক্ত বড় বড় মিল মালিকরা আজকে চাল নিয়ে ব্যবসা করছে। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করুন।’

জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে ছিলেন দলটির নেতা আবুল হাসান রুবেল, তাসলিমা আখ্তার, বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাস নাইন বাবু, আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

 

আরও পড়ুন: 
রোহিঙ্গা শরণার্থী: চিহ্নিত এলাকায় চলছে ক্যাম্প ও রাস্তা নির্মাণ
জাতিসংঘে ট্রাম্প, সুষমার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেখ হাসিনার
দেবীর আবাহন সম্পন্ন, আজ শুভ মহালয়া