শিশু-নারী-পুরুষ সবার জন্য খিচুড়ি!

শরণার্থীদের জন্য রান্না করা খিচুড়িমিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রান্না করা খাবার বলতে দেওয়া হচ্ছে খিচুড়ি। গর্ভবতী নারী, দুগ্ধপোষ্য শিশু, সাবালক কিংবা পুরুষ সবার জন্যই দেওয়া হচ্ছে একই খাবার। তবে সবার জন্য একই রকম খাবারে অসুবিধায় পড়েছেন গর্ভবতী নারী ও শিশুরা। পুষ্টিবিদরা বলছেন, গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে অতিসত্ত্বর ভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবস্থা না করা গেলে অপুষ্টির কারণে খর্বকায় শিশু জন্ম নেবে। এসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হবে কম।

জাতিসংঘের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৫শে আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছেন। এদের মধ্যে শিশু রয়েছে দুই লাখ ৪০ হাজার, এক বছরের কম বয়সী শিশু ৩৬ হাজার,অন্তঃসত্ত্বা এবং প্রসূতি নারী রয়েছে আরও ৫২ হাজার।

খেচুড়ি-৩এই বিপুল সংখ্যক নারী ও শিশুর জন্য আলাদা কোনও খাবার নেই উল্লেখ করে মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেন, জরুরি পরিস্থিতিতে কয়েকদিন এমন খাদ্য ক্যাম্পে দেওয়া হবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু গর্ভবতী নারী ও কোলের শিশুর জন্য দ্রুত তাদের উপযোগী খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

খেচুড়ি-২পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গর্ভাবস্থায় বেশি আমিষ দরকার। ভ্রূণের সঠিক বৃদ্ধি, স্তনগ্রন্থীর বৃদ্ধি ইত্যাদি নিশ্চিত করতে আমিষ প্রয়োজন। একজন সন্তান সম্ভবা নারীর দৈনিক ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ দরকার হয় এ সময়। এই আমিষের মূল উৎস হবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল ও সিমের বিচি। এছাড়া লৌহ,ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন সমান মাত্রায়। তারা বলছেন, স্বাভাবিক অবস্থায় একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দৈনিক ৩০ গ্রাম লৌহ বা আয়রন দরকার হয়, কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে দরকার হয় দৈনিক ৩৮ গ্রাম। এসব যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা করা উচিত।

খেচুড়ি-১খিচুড়ি সঙ্গে আলু দিয়ে কিছুদিন সামাল দেওয়া যেতে পারে উল্লেখ করে পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. সুকৃতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গর্ভবতী নারীদের খিচুড়িতে বাড়তি ডালের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর সঙ্গে বাদাম, বিচি জাতীয় খাবার দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন তাদেরকে মাছ মাংস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু খাবারে অন্য কিছু যোগ করে ক্যালরিটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে তেলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া জরুরি। সঙ্গে সবজি যুক্ত করা গেলে ভালো।

এর ফলে শিশুদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম ওজনের বাচ্চা জন্মাতে পারে আর শিশুর সঠিক ওজন না হলে তার রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা কম থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

খেচুড়িএদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খা্দ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসময় নারীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রোটিন, ক্যালরি ও ফ্যাট দিতে হয়। স্বাভাবিক সময়ে নারীদের যে খাবার দিতে হয় গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে বেশি দিতে হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কত ক্যালরি দিচ্ছে তা মেপে বলা যেহেতু সম্ভব হচ্ছে না সেহেতু আন্দাজ করে এসব ঘাটতি পূরণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে সাধারণ মানুষের থেকে গর্ভবতীকে ১৫০ কিলো ক্যালরি বেশি দিতে হয়। নিঃসন্দেহে অন্য আমিষও বেশি দিতে হবে। খিচুড়িতে ক্যালরি যতটুকু পাচ্ছে তা উদ্ভিজ্জ আমিষ, এর বাইরে অন্যান্য মাইক্রোনিউট্রেন্ট কিভাবে পাবে? এ ব্যবস্থা ইমার্জেন্সিতে কয়দিন চলতে পারে কিন্তু বেশিদিন চললে একটা বিকলাঙ্গ প্রজন্ম পাওয়া যাবে।

এসব ক্ষেত্রে শিশুর কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, ক্যালরি ঘাটতি হলে মায়ের থেকে গর্ভের শিশুর ক্ষতি বেশি হয়। আয়োডিনের অভাবে ব্রেনের ডেভেলপমেন্ট থেমে যায়। নিরাপদ পানি পাচ্ছে কিনা সেটাও দেখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

বিশ্বে মুসলমানরাই কেন শরণার্থী হবে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিন: শেখ হাসিনা