ঠিক এই সময়ই সীমান্তের এপারে একটি পরিবার সেই আগুন দেখতে দেখতে বিলাপ করছিল। মধ্যবয়সী রোহিঙ্গা নারী নাসিমা খাতুনের চোখ দিয়ে তখন অশ্রুর ধারা। কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে অচেতন হয়ে পড়লেন তিনি। পাশে থাকা ছেলে-মেয়েরা তখন ব্যস্ত তার জ্ঞান ফেরাতে। সেই অবস্থাতেই তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানালেন, ওপারে যে ঘরবাড়িগুলো পুড়ছে, তার মধ্যে তাদের বাড়িও রয়েছে। এপারে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ায় তাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঘুমধুমের বিজিবি চেকপোস্ট এলাকায় দেখা যায় এই দৃশ্য। আগুনের পাশাপাশি কমপক্ষে ১০ রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা গেছে এসময়। নাসিমা খাতুনের পরিবার জানায়, আগুনে পুড়তে থাকা এলাকাটি রাখাইন রাজ্যের তমব্রুর পশ্চিমকুল গ্রাম।
নিজেদের বাড়িঘরে আগুন জ্বলতে দেখে অচেতন হয়ে পড়া নাসিমা খাতুনের জ্ঞান ফেরে মিনিট ১৫ পর। তবে শোকে মূহ্যমান নাসিমা কথা বলতে পারছিলেন না। তার মেয়ে মনোয়ারা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো আগেই চলে এসেছি। কিন্তু বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। আমাদের সবকিছু বাড়িতেই ছিল। কিন্তু আমাদের সব ঘর তো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। খালাদের কয়েকটি ঘরও আছে এর মধ্যে। চেয়ে চেয়ে দেখছি, চোখের সামনে সবকিছু পুড়ে যাচ্ছে। অথচ এপারে দাঁড়িয়ে কিছুই করতে পারছি না।’
নাসিমা খাতুনের বোন নুর নাহার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমাদের ঘর পুড়ছে, আর আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি। আমাদের তো কিছু করার নাই।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে গত প্রায় এক মাসে তৈরি হওয়া মানবিক সংকটের প্রতীকী চিত্র বোধহয় এটাই। এক পারে যখন আগুনের শিখা গিলে খাচ্ছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি, কাঁটাতারের অন্য পারে তখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওইসব ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের চোখে অশ্রুর ধারা।
আরও পড়ুন-
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে রাশিয়ার সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ
রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্টিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শনে সেনাপ্রধান
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সৌদি আরবের আহ্বান