রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে সায় নেই সরকারের

 

রোহিঙ্গা সংকটমিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে সায় নেই সরকারের। এ বিষয়ে একাধিকবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রস্তাব দিলেও সরকার তাতে রাজি হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে পরবর্তী সময়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।  

প্রসঙ্গত, সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিপ ব্র্যানডি। বৈঠক শেষে ত্রাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তারা অনুপ্রবেশকারী।’

এই প্রসঙ্গে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশকে একাধিকবার প্রস্তাব দিয়েছে সব রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা দিতে। কিন্তু বাংলাদেশ শরণার্থী ঘোষণা না করার পক্ষে অবস্থান বজায় রেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার যদি রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি থাকে, তবে শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা না দিলেও তারা ফেরত যেতে পারবে।’ এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ বিরাজ না করলে একজন রোহিঙ্গাও ফেরত যাবে না। আবার মিয়ানমার তাদের স্বাগত জানাবে, এমন কোনও নীতির প্রতিফলনও গত চল্লিশ বছরে দেখা যায়নি।’

সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মিয়ানমারের অনীহার কারণে ২০০৫ সাল থেকে নিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের একজনকেও আজ পর্যন্ত  ফেরত পাঠাতে পারিনি। গত একমাসে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। আর এখন ইউএনএইচসিআরের হাতে এমন কোনও অস্ত্র নেই, যার মাধ্যমে ওই সংস্থা মিয়ানমারকে আলোচনার টেবিলে বসাতে পারবে। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কারণেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে কোনও রেজ্যুলেশন উত্থাপনের বিষয়ে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবে চীন ও রাশিয়া।’

সব রোহিঙ্গাকে শরণার্থী হিসাবে ঘোষণা দিলে ইসরায়েলের পাশে প্যালেস্টাইন যেভাবে একটি শরণার্থী শিবির হিসেবে অবস্থান করছে, বাংলাদেশের কক্সবাজারের অবস্থান সে ধরনের হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।

এদিকে, রবিবার সন্ধ্যায় গুলশানের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ঘোষণা করাসহ তাদের সবাইকে সেবা দেওয়ার দায়িত্বও রয়েছে আমাদের।’