আতপ চাল খাওয়ার অভ্যাস কত দিনে হবে?

ওএমএস (ছবি: সংগৃহীত)দেশের সাধারণ মানুষ সেদ্ধ চালের ভাতে অভ্যস্ত। স্বাভাবিকভাবেই ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) ট্রাক থেকেও তারা সেদ্ধ চাল কেনার পক্ষে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারি সিদ্ধান্তে খোলা বাজারে আতপ বিক্রি শুরু হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা আতপ চাল কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে ‘ট্রাক সেল’ থেকে আতপ চালের পাশাপাশি আটা বিক্রি করায় ক্রেতাদের কেউ কেউ সেদিকেই ঝুঁকছেন। তারা বলছেন, আতপ চালের চেয়ে আটাই ভালো। সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ‘ট্রাক সেল’ ও ‘ওএমএস’ ডিলার সমিতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সেদ্ধ চালের পরিবর্তে আতপ চাল কেবল বিক্রি করলেই হবে না, সে চাল খাওয়ায় মানুষ অভ্যস্ত হতে হবে। কিন্তু কত দিনে সাধারণ মানুষ এই আতপ চালে অভ্যস্ত হবে—সে প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রমের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই চাল কিনতে আসছেন নতুন নতুন ক্রেতা। কিন্তু আতপ চালে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বুধবার দুপুর ১২টায়ও বাংলামোটর-কাঠাল বাগান ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রমে দেখা গেছে, ক্রেতারা আতপ চাল কিনতে রাজি হচ্ছেন না। তবে কেউ কেউ আটা কিনছেন। 

কাঁঠালবাগানের গৃহবধূ সোনিয়া আটা কিনেছেন চার বার। এদিনও আটাই কিনলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আতপ চাল খাওয়ার অভ্যাস নেই। ভাত নরম হয়ে যায়। তাই আতপ চাল কিনছি না। তবে আটা খুব ভালো।’

হাতিরপুল পুকুরপাড় থেকে আটা কিনতে এসেছেন সুজন। তিনি বলেন, ‘আতপ চাল খাওয়ার অভ্যাস নেই। তাই শুধু আটাই কিনব।’

নারগিস ও হাসনা একসঙ্গে এসেছেন কাঁঠালবাগান থেকে। নারগিস প্রথমবারের মতো পাঁচ কেজি চাল নিলেন। ভালো হলে তিনি আবার কিনবেন। হাসনা বলেন, ‘নারগিস কিনেছেন, ভাত খাওয়া গেলে পরে আমি কিনব।’

বাংলামোটর-কাঁঠালবাগান এলাকার ‘ট্রাক সেল’কর্মী সাইদ বিন কাওসার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩০জন চাল ও আটা কিনেছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ ক্রেতাই আটা কিনেছেন। আতপ চাল খাওয়ার অভ্যাস এখনও তাদের হয়নি।’

এই প্রসঙ্গে ওএমএস ডিলার সমিতির সভাপতি আলমগীর সৈকত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেকটা জোর করেই আতপ চাল বিক্রি করছি।’ 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশে চাল ও আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় খোলা বাজারে প্রতিকেজি ৩০ টাকায় আতপ চাল, ১৭ টাকায় আটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচি শুরু করে। শুরু থেকেই আতপ চালের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল না। আতপ  চাল খাওয়ার অভ্যাস না থাকায় ক্রেতারা আতপ চাল কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

চাল বিক্রির কার্যক্রমের প্রথম দিনই ডিলাররা জানিয়েছেন, আতপ চালে দেড় টাকা কমিশন, আটায় এক টাকা। চাল-আটা মিলিয়ে বরাদ্দ পাওয়া দুই টন বিক্রি হলে লাভ আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু ট্রাকভাড়া এক হাজার টাকা, দুই জন কর্মীকে ৪০০ করে ৮০০ টাকা। তাদের খাওয়ার জন্য দিতে হয় আরও ২০০ টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা। এই হিসাবে তাদের প্রতিদিন লোকসান হয় এক হাজার টাকা।

লোকসান হলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় কমিশন বাড়ায়নি খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রমে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ওএমএস ডিলার সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, কমিশন না বাড়ালে ৫ অক্টোবরের পর থেকে খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রি বন্ধ রাখা হবে।  

কমিশন বাড়ানোর দাবিতে ৬ অক্টোবর থেকে ডিলারদের ধর্মঘটের বিষয়ে বুধবার (৪ অক্টোবর) খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমরা তাদের বলেছি, ‘ট্রাক সেল’ চালু রাখতে। কমিশন বাড়ানো তো সহজে হয় না, সময় লাগে। তারা যদি চালু রাখে, তাহলে আমরা কমিশন বড়াতে পারব।’

এ প্রসঙ্গে সমিতির সভাপতি আলমগীর সৈকত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিশন বাড়ানো হয়নি। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যদি সরকার কমিশন না বাড়ায়, তাহলে ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ঘর্মঘট শুরু করব ৬ অক্টোবর থেকে।’ শুক্রবার ‘ট্রাক সেল’ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শনিবার থেকে এ ধর্মঘট চলবে বলেও তিনি জানান।   

আরও পড়ুন: ৫ অক্টোবরের পর খোলাবাজারে চাল বিক্রি বন্ধের ঘোষণা ডিলারদের