সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বাংলাদেশের জনগণের জন্য নেওয়া যেতে পারে। কারণ এর ব্যয়ভার বাংলাদেশকে বহন করতে হবে।’ তার মতে, ‘বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ সংরক্ষণ করা উচিত।’
সাবেক এই গভর্নর আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তাও রোহিঙ্গাদের নামে নেওয়া ঠিক হবে না।’
একই মত পোষণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের কোনও ঋণই জনগণের জন্য নয়। রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া ঋণের বোঝা বাংলাদেশকে টানতে হবে। শেষ পর্যন্ত এই ঋণ বাংলাদেশ বা রোহিঙ্গা কারও উপকারে আসবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের উপকারভোগী হচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তারা ও কনসালটেন্ট গ্রুপ।’
তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি এই ঋণ নেওয়ায় দোষের কিছু দেখি না। বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী প্রশংসিতও হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা আসছে। ভবিষ্যতে এই সহায়তা কমতে থাকবে। তখন বাংলাদেশকেই রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ না নিলে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। যা বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পৃক্ত সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের নীতি-বহির্ভূত। এর সঙ্গে জড়িত শর্তাবলি খুব কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিতে হলে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ঘোষণা দিতে হবে। যা আমাদের নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত।’
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ঘোষণা করার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা। এমনকি মিয়ানমারও তাদের শরণার্থী হিসেবে উল্লেখ করছে।
এদিকে, শরণার্থী বিষয়ে গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করে তাদের শরণার্থী হিসেবে ঘোষণা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার কোনোদিন রোহিঙ্গাদের শরণার্থী বলেনি, এখন বলছে। এর পেছনে নিশ্চয় কোনও কারণ আছে।’ রোহিঙ্গাদের শরণার্থী ঘোষণা দিলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলেও তিনি মনে করেন।