মূলত প্রধান বিচারপতি একমাসের ছুটি নেওয়ার পরই শুরু হয়, তার বিদেশে যাওয়ার দিনক্ষণ গণনা। দেশের সাধারণ মানুষকে সেই খবর জানানোর চেষ্টায় সেখানে ব্যস্ত সময় পার করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রধান বিচারপতিকে অনুসরণ করেছেন তারা। প্রতিমূহুর্তের খবর জানাতে বাসভবনের প্রধান ফটকে সংবাদকর্মীরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন।
সব প্রক্রিয়া শেষ করে শুক্রবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে তিনি সস্ত্রীক বাসা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন প্রধান বিচারপতি। গাড়িটি প্রধান ফটকে আসার পর সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে গাড়িটি থেমে যায়। এ সময় স্ত্রী সুষমা সিনহাকে গাড়ির ভেতর তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রায় ৩০ সেকেন্ড গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রধান বিচারপতি গাড়ি থেকে বের হয়ে হাত নাড়াতে থাকেন। তখন সংবাদকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরলে তিনি কথা বলা শুরু করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অসুস্থ না, আমি অসুস্থ না। আমি ভালো আছি, আমি পালিয়েও যাচ্ছি না। আমি আবার ফিরে আসবো। আমাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়নি। আমি নিজে থেকেই ছুটি নিয়েছি।’
তিনি আরও কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন। তখন সাংবাদিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে ভিড় কমাতে পুলিশ বাঁশি দিতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য থামিয়ে বলেন, ‘এটাই আমার বক্তব্য।’
এসময় তিনি তার পকেট থেকে একটি ভাঁজ করা কাগজ বের করে সাংবাদিকদের দেন। কাগজটি দেওয়ার সময় তিনি আবার বলেন, ‘এখানে সব আছে।’
এরপর তিনি গাড়িতে উঠে বসলে দ্রুত গাড়িটি হোটেল শেরাটনের দিকে চলে যায়। এসময় প্রধান বিচারপতির গাড়িটির সামনে ও পেছনে একটি করে পুলিশের পিকআপ ছিল। পিকআপের পেছনে আরও দুটি গাড়ি ছিল। পরে গাড়িটি বাংলামোটর হয়ে বিমানবন্দরের দিকে চলে যায়। পথে কোথাও যানজটে প্রধান বিচারপতির গাড়ি আটকায়নি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে গাড়ি বহরটি ভিভিআইপি গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের এসকিউ ৪৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তবে প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সুষমা সিনহারও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা হলেও তিনি বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসেন।
লিখিত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও একটু শঙ্কিত বটে। কারণ, গতকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিনমাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে।’
বিচারপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবণতি (অবনতি) হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্ধিত ছুটিতে প্রধান বিচারপতির বিদেশে অবস্থানের সময়ে, অর্থাৎ ২ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, অথবা তিনি দায়িত্বে না ফেরা পর্যন্ত বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা প্রধান বিচারপতির কার্যভার সম্পাদন করবেন।
২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান এসকে সিনহা। তার চাকরির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
গত ৩ জুলাই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের পরই মূলত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন:
বিমানবন্দরে সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি
বিমানবন্দরের পথে সস্ত্রীক প্রধান বিচারপতি
আমি অসুস্থ না, ফিরে আসবো: প্রধান বিচারপতি
সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে: প্রধান বিচারপতি
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে সমালোচনা করেছেন, তাতে আমি বিব্রত: প্রধান বিচারপতি