খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর

পুরান ঢাকায় অস্থায়ী পাঁচ নম্বর আদালতে খালেদা জিয়া (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণের পর জামিন পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পুরান ঢাকার বকশিবাজারে ঢাকার অস্থায়ী পাঁচ নম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে তিনি জামিন আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এক লাখ টাকা করে দুই মামলায় মোট দুই লাখ টাকার মুচলেকায় তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে অনুমতি না নিয়ে খালেদা বিদেশ যেতে পারবেন না বলেও আদেশ দেন আদালত। খালেদা জিয়া ছাড়া বাকি আসামিদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছে।   

বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান আদালতের কার্যক্রম শুরু করেন বেলা ১১টা ৪মিনিটে। খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছান ১১টা ১৭ মিনিটে। ১১টা ১৯ মিনিটে আদালতে প্রবেশের পর খালেদা জিয়া আদালতের অনুমতি নিয়ে এজলাসের সামনে একটি চেয়ারে বসেন। কার্যক্রম শুরুর পর খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দুদকের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিন আবেদন করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। আবেদনে আপত্তি দেন দুদকের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া জামিনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তার জামিনের বিরোধিতা করছি। খালেদা জিয়া আদালতের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন। দুইবার তাকে জামিন দেওয়া হয়েছে। ৩৩ বার সময় নিয়েছেন। ৩২ জনের সাক্ষী হয়ে গেছে। আমরা যুক্তিতর্কের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘যদি কোনও আসামি সময় চায় তাহলে কোর্ট চাইলে দিতে পারেন। এই বিষয়ে বিরোধিতা করার কিছু নেই। জামিন চাচ্ছি।’ 

জামিন আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার বক্তব্য রেকর্ড করার কথা বলেন বিচারক। বক্তব্য রেকর্ডের জন্য ১৫ মিনিট সময় দেন আদালত। 

দুর্নীতির দুই মামলায় গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানির কার্যক্রম শেষ করে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের তারিখ ঠিক করে দেন।

আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, চিকিৎসার জন্য প্রায় তিন মাস দেশের বাইরে ছিলেন খালেদা জিয়া। বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে তিনি দেশে ফিরেছেন। এরমধ্যে এই দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে দুদক জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন- খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পায়নি পুলিশ