পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান বসবে এ মাসেই

সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান, ফাইল ছবিস্বপ্নের পদ্মা সেতুতে দ্বিতীয় স্প্যান উঠবে নভেম্বরের শেষ দিকে। এ লক্ষ্যে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানোর পর সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এখন থেকে প্রতি মাসেই একটি করে স্প্যান ওঠানো সম্ভব হবে। এখন একটি পিলার উঠলেই একটি স্প্যান বসানো যাবে। ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 প্রথম স্প্যান বসানোর পর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম তাদের নিজ নিজ প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, হয়তো এখন থেকে প্রতি মাসেই একটি করে স্প্যান ওঠানো সম্ভব হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা জানিয়েছিলেন, জাজিরা পয়েন্টে পিলারের কাজ শেষের দিকে। প্রতি মাসে একটি করে পিলার দাঁড়ালেই তার ওপর একটি স্প্যান বসানো সম্ভব। সংশ্লিষ্টদের সেই প্রত্যাশার জের ধরে অনেকেই আশা করেছিলেন, হয়তো অক্টোবরে সেতুতে উঠবে দ্বিতীয় স্প্যান। কিন্তু তা হয়নি। কারিগরি জটিলতাসহ নানা কারণে সেতুর ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাজ স্প্যান ওঠানোর মতো করে পুরোপুরি উপযুক্ত করা যায়নি। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের যেকোনও দিন দ্বিতীয় স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে জানিয়ে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’ 

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতুর অগ্রগতি সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। মূল সেতুর চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত মূল সেতুর কাজের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ শতাংশ। সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৭ শতাংশ। ৩০ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) খুঁটির (পিয়ার) ওপর স্থাপন করা হয়েছে।

প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রমত্তা পদ্মার প্রবল স্রোত ও ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে চলছে নির্মাণযজ্ঞ। নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠন নিয়ে জটিলতা কাটিয়ে বর্ষায় নদীর প্রবল স্রোতকে উপেক্ষা করে এ নির্মাণ কাজ চলছে। সব ধরনের প্রতিকূলতা জয় করে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ চলছে পদ্মার দুই পাড়েই।’ জাজিরা অংশে সব পিলারের পাইলিংয়ের মাটি পরীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।

সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে। শিগগিরই অন্য স্প্যানগুলোও বসানো হবে। ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি পিলারের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই শেষ হচ্ছে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাজ। ৩৮ নম্বর পিলারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই দুই পিলার ধরে আরও দু’টি স্প্যান বসবে শিগগিরই।

পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ, ফাইল ছবি
এই প্রসঙ্গে প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম  বলেন, ‘প্রথম স্প্যানটি অস্থায়ী বেয়ারিংয়ের ওপর বসানো হয়েছে। পদ্মা সেতুর রঙ হবে সোনালি। তবে রাতে সেতুটিতে জ্বলবে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে লাল ও সবুজ বাতি। সেভাবেই সেট করা হবে বাতি। পদ্মা নদীর পানির স্তর থেকে ৫০ ফুট উঁচুতে বসবে প্রতিটি স্প্যান।’

জানা গেছে, এই মুহূর্তে ৫টি স্প্যান বসানোর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতোমধ্যেই প্রস্তুত করা স্প্যানের লোড টেস্ট করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া।  তদারকিতে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল।  নদীতে মূল সেতুর মোট ২৪০টি পাইলের মধ্যে ৭৫টি পাইল বসেছে। এছাড়া দুই পাড়ের দু’টি ট্রান্সজিশন পিয়ারের ৩২টির মধ্যে ১৬টি স্থাপন হয়েছে। এখন বাকি মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর  ট্রান্সজিশন পিয়ারের ১৬টি পাইল। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১৮৬টি পাইল বসেছে। এখানে আর মাত্র ৭টি পাইল বাকি সংযোগ সেতুর জন্য। আর মাওয়ায় এ পর্যন্ত সংযোগ সেতুর ১৭২টির মধ্যে ৭টি পাইল বসেছে।

প্রসঙ্গত, এরআগে চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে এই সেতু দৃশ্যমান করতে স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও বিভিন্ন টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। অবশেষে নির্মাণকাজ শুরুর প্রায় দুই বছর পর ৩০ সেপ্টেম্বর ওঠে প্রথম স্প্যান।

পদ্মা সেতু
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৪৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে থাকবে মোট ৪২টি পিলার। এরমধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হবে নদীতে। দু’টি নদীর তীরে। নদীতে নির্মাণ করা প্রতিটি পিলারে ছয়টি করে পাইলিং করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১২৭ মিটার পর্যন্ত। একটি পিলার থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার।  ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে দু’টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এছাড়া দুই পাড়ের সংযোগ সেতুসহ সেতুটি ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ।