মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিতে অনীহা সিটি করপোরেশনের

 

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। কিন্তু পরিকল্পনায় ত্রুটি, লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতাসহ নানা কারণ দেখিয়ে ফ্লাইওভারটির দায়িত্ব নিতে অনীহা দেখাচ্ছে সংস্থা দু’টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বিষয়টি আরও কয়েক দিন পর্যবেক্ষণের কথা বলছেন। আর উত্তর সিটির প্যানেল মেয়র ফ্লাইওভারটি তার সংস্থার মধ্যে নয় বলে জানান। এ অবস্থায় ফ্লাইওভারটির দায়িত্ব সিটি করপোরেশনে যাচ্ছে নাকি এলজিইডিতেই থাকছে—এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আর প্রকল্প পরিচালক বলছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই যার যার এলাকা অনুযায়ী দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’

পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নকশা অনুমোদনের পর থেকেই মগবাজার মৌচাক-ফ্লাইওভারের নিয়ে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। এরমধ্যে ফ্লাইওভারে ট্রাফিক সিগন্যাল, বাম দিকে স্টিয়ারিং, যানজট লেগে থাকা, ওঠা-নামার র‌্যাম্প জটিলতাসহ নামার লুপে যানজট লেগেই থাকে। বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও বিশদভাবে উঠে এসেছে। আর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা ফ্লাইওভারটিকে ঢাকার ‘বোঝা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সে কারণে এই ‘বোঝা’র দায়িত্ব নিতে চায় না কোনও সিটি করপোরেশনই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই সিটি করপোরেশনের একাধিক প্রকৌশলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার নিয়ে এরইমধ্যে নানা জাটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন যানজটের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, সেই চিত্রই বলে দিচ্ছে,এই ফ্লাইওভার যানজট নিরসনে কোনও ভূমিকা রাখছে না। বরং যানজটের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া এরইমধ্যে নকশা ত্রুটির কুফলসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এটি এখন সড়কের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর দায়ভার এলজিইডিকেই নিতে হবে।’  

ফ্লাইওভারের দায়িত্ব নিতে কতটা প্রস্তুত দক্ষিণ সিটি, এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘ফ্লাইওভার উদ্বোধন হলো মাত্র কয়েক দিন আগে। বিষয়টি কী হচ্ছে, এখনও আমরা ক্লিয়ার না। বুঝতে অন্তত আরও ৮-১০ দিন সময় লাগবে। এখন একেক সময় একেক চিত্র দেখা যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন ধরনের খবর পাচ্ছি। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের ওপরই নির্ভর করছে।’

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফ্লাইওভারটি শুধু দক্ষিণ সিটি নয়, উত্তর সিটিতেও পড়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই ফ্লাইওভারটি দুই সিটি করপোরেশনের কাছে দ্রুত হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু ফ্লাইওভার ব্যবহারের ম্যানুয়েল তৈরির কাজ চলছে। এরপর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এলাকা অনুযায়ী দুই সিটি করপোরেশনের কাছে ফ্লাইওভারের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।’

ফ্লাইওভারটি দুই সিটি করপোরেশনে পড়েছে। এ অবস্থায় সংস্থা দু’টির কাছে মন্ত্রণালয় থেকে হস্তান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানালেও বিষয়টি মানতে নারাজ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ওসমান গণি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ফ্লাইওভার নিয়ে বিভিন্ন কথা শুনতে পাচ্ছি। এটা আমাদের মধ্যে নয়, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পড়েছে। এটার দায়িত্ব আমরা কেন নেবো?’

প্রায় ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ ফ্লাইওভারের সিংহভাগই পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। উত্তর সিটিতে রয়েছে ফ্লাইওভারের কাওরানবাজার ও সাতরাস্তাসহ কিছু অংশ। শুরুতে পুরো ফ্লাইওভারটি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শেষমুহূর্তে দুই সিটি করপোরেশনের কাছেই হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ফ্লাইওভারের মূল অথরিটি সিটি করপোরেশন। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই সিটির কাছে এটি হস্তান্তর করা হবে। এক্ষেত্রে যেই সংস্থার এরিয়ায় যেটুকু পড়েছে, সেটুকু সেই সংস্থার কাছেই হস্তান্তর করা হবে।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো.বিলাল বলেন,‘আমাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।’

উল্লেখ্য,২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিন তলাবিশিষ্ট চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার। এটি ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল। ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ হাজার ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর প্রতি মিটারে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা।

ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ করা হয়েছে তিন ভাগে। প্রথম অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি পর্যন্ত। এই অংশটি ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন।এই ফ্লাইওভারটির দ্বিতীয় অংশ হলো, বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক পর্যন্ত। এই অংশটি যান চলাচলের জন্য গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ফ্লাইওভারটির তৃতীয় অংশ শান্তিনগর-মালিবাগ-কাকরাইল ও রাজারবাগ অংশ ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেন।