কারাগারের গায়ে তাদের রক্ত

পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যকারাগারকে বলা হয় সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। অথচ রাজধানীর পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঘটেছিল নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ১৯৭৫ সালের  ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, এএইচএম কামরুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে হত্যা করা হয়। যেসব কক্ষে তাদের হত্যা করা হয় সেখানে এখনও রয়েছে গুলির দাগ। জাতীয় চার নেতার স্মৃতি রক্ষার্থে কারাগারের ভেতরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’।

২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর ‘জাতির জনক  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর’ ও ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’কে জাতীয় জাদুঘরের শাখা জাদুঘর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গতবছর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে শত বছরের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য সাময়িক সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে বিশেষ দিবস ছাড়া জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে।

23201762_1633233880031669_2016804573_n

নাজিমউদ্দীন রোডের পুরনো কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর কিছুদূর এগুলে ডান দিকের রাস্তাটি গেছে শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘরের দিকে। আর বামের রাস্তাটি গেছে কারাগারের সুউচ্চ দুই দেয়ালের মাঝ দিয়ে। কিছুটা যাওয়ার পর চোখে পড়বে ছোট একটা ফটক।  ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর বাম পাশে রয়েছে ‘নীল নদ’, যেখানে বিদেশি কয়েদিদের রাখা হতো। এর পাশেই রয়েছে ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’।

জাদুঘরে প্রবেশ ফটকের ডানপাশে রয়েছে উঁচু একটি বেদি। যেখানে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর দীর্ঘসময় ফেলে রাখা হয়েছিল। সবুজ রঙ করা বেদির ওপরে লাল রঙ করা হয়েছে।  যা দিয়ে রক্তের ছাপ বোঝানো হয়েছে।

হত্যার পর এ বেদিতে চার নেতার লাশ ফেলে রাখা হয়

ফটক পেরিয়ে সামনে রয়েছে চার নেতার ভাস্কর্য। যার প্রত্যেকটির নিচে লেখা রয়েছে তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও রাজনৈতিক জীবন। ভাস্কর্যগুলোর পাশেই রয়েছে তিন বড় কক্ষের একটি ভবন। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতি কক্ষ’। এই তিন কক্ষে ছিলেন জাতীয় চার নেতা। এখানেই তাদের হত্যা করা হয়।

23163652_1633233883365002_402634847_n

ভবনের প্রথম কক্ষটি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নামে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কক্ষটি নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে এএইচএম কামরুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নামে। প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে তাদের ব্যবহৃত আসবাবপত্র। কারা জীবনে ব্যবহৃত তাদের প্রায় প্রতিটি জিনিস আলাদা আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। কারাকক্ষের দেয়ালে রয়েছে গুলির চিহ্ন। যা লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা।

লাল রং করা গুলির চিহ্ন

প্রতিবছর ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার স্মৃতি জাদুঘরে তাদের ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্বজন, আওয়ামী লীগের নেতারা ও কারা কর্তৃপক্ষ।

ছবি: রাফসান জানি

আরও পড়ুন:

বাবাকে যে সেলে হত্যা করা হয়েছিল সেখানে ৯ মাস ছিলাম: নাসিম