অর্থ সংকটে খুঁড়িয়ে চলছে বাংলা একাডেমি

বাংলা একাডেমি 

বাঙালির মেধা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমি। দীর্ঘ ৬২ বছরের পথচলায় বেড়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিসর, বেড়েছে ব্যস্ততা। মানুষের আস্থার চাপও কম নয়। কিন্তু সে তুলনায় মোটেও বাড়েনি আর্থিক সক্ষমতা। বরং চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে এরকম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি। একাডেমি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা মানসম্মতভাবে কাজ করতে পারছেন না।

ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষায় লেখা নানা রকম গ্রন্থ সংগ্রহ ও বাংলা ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ করতে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা সংগ্রহের মাধ্যমে এটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষকদের অন্যতম প্রধান ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে।  কিন্তু জনবল ও অর্থ সংকটের কারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের দাবি, একাডেমির লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকারের উচিত হবে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো।

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলা একাডেমি দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পদ। এটি ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ করে। প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যও তাই। প্রতিষ্ঠাকালে এর পরিসর অনেক ছোট ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিসর ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়েছে। ফলে বতর্মানে সরকার এর জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। বাংলা একাডেমিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে এর বাজেট বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বাংলা একাডেমি
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময় বাংলা একাডেমির জন্য বাজেট ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা। তখনও  বাংলা একাডেমি এক প্রকার চলেছে। কিন্তু এখন যে হারে এর পরিসর ও প্রকল্প বৃদ্ধি পেয়েছে সেই হারে অর্থ বরাদ্দ বাড়েনি। ২০১৩ সালের আইনে ৫টি বিভাগের জায়গায় ৮টি বিভাগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ৫টি প্রকল্প, ঢাকা ও এর বাইরে এমনকি বিদেশের বইমেলাগুলোতেও বাংলা একাডেমির স্টল থাকে। সেখানে বই পাঠানো, প্রতিনিধি পাঠানো, বই ছাপানো, বই ও পত্রিকা সংরক্ষণসহ অনেক কাজ করতে হয়।
চলতি অর্থবছরে বাংলা একাডেমির জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে মনে করেন একাডেমি সংশ্লিষ্টরা।
বাংলা একাডেমি সূত্র জানায়, একাডেমি প্রতিবছর যে ২১শে বইমেলার আয়োজন করে সেখানেও সরকার আলাদা কোনও টাকা বরাদ্দ দেয় না। মেলায় বাংলা একাডেমির খরচ হয় দুই কোটি টাকা। কিন্তু আয় হয় খুবই কম। অন্যদিকে, বইমেলা ও ঢাকা লিট ফেস্টের সময় বিদেশি যেসব অতিথি আসেন তাদের যথাযথ আপ্যায়ন করতেও ব্যর্থ হয় বাংলা একাডেমি।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমির কাজ ও দায়িত্ব আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। যেমন, বাংলা একাডেমি প্রতিবছর বইমেলার আয়োজনের পাশাপাশি অনেকগুলো বিষয়ের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। যেখানে খরচও অনেক বেশি। কিন্তু এর জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দরকার তা নেই।’

বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা লিট ফেস্টের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এক কোটি টাকা দিয়েছে। এত বড় একটি আয়োজনে বিদেশি লেখক-সাহিত্যিকরা ছাড়াও সারাদেশ থেকে লেখকরা আসবেন। তাদের আপ্যায়নসহ পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন ও এটিকে আন্তর্জাতিক মানের করা এই টাকা দিয়ে সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বাংলা একাডেমির নতুন নির্মিত এনামুল হক ভবনের পঞ্চম তলায় বিদেশি অতিথিদের জন্য একটি গেস্টরুম রয়েছে। কিন্তু ভবনটিতে লিফট না থাকায় তাদের সেখানে রাখা সম্ভব হয় না। অর্থ সংকটে লিফট বসানো যায়নি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হলে বাড়তি অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন। আগের তুলনায় একাডেমির পরিসর অনেক বেড়েছে কিন্তু অর্থ বরাদ্দ সে তুলনায় কম।’

তিনি বলেন, ‘বইমেলার জন্য সরকার কোনও অনুদান দেয় না। দুই কোটি টাকা আমাদের বইমেলা করার জন্য খরচ হয়। বইমেলার পর যা আয় হয়, তাও খরচ হয়ে যায়।’

গ্রন্থাগার ও পত্রিকা আর্কাইভটি বেশি সংকটে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আর্কাইভটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ সংকটের কারণে সেটির দিকে নজর দিতে পারছি না। তবে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছি। বাংলা একাডেমিতে অনেক বই রয়েছে সেগুলো ছাড় দিয়ে বিক্রি করছি। এই টাকা হাতে এলেই আর্কাইভটির দিকে নজর দেবো। আশা করি জানুয়ারি মাস থেকেই এর কাজ শুরু হবে। নতুন একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই ভবনে ফোকলোর ইনস্টিটিউট ও অনুবাদ ইনস্টিটিউট থাকবে। ওই ভবনের নিচতলাটি পত্রিকা আর্কাইভের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।’