‘আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধু এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন’

নাগরিক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ‘সংক্ষিপ্ত মহাকাব্য’ বলে অভিহিত করছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। ৭ মার্চের ভাষণ থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা আসে উল্লেখ করে তারা বলেন,পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে, যেখানে দেশ ও একজন নেতা সমার্থক। আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধু এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃত পাওয়ায় শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রামেন্দ্র মজুমদার ও নুজহাত চৌধুরী। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ থেকে আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এসেছে। আমি ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাই তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’  

সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ ছিল মহাকাব্য। ১৮ মিনিটের ভাষণে কোনও তৎসম শব্দ ছিল না, বঙ্গবন্ধু চলিত সহজ সরল ভাষায় পুরো বক্তব্য দিয়েছেন। আমি খুব কাছ থেকে সেই বক্তব্য শুনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এটা নিয়ে কোনও আপস করা যাবে না। ষড়যন্ত্র চলছে, যেকোনোভাবে এটি মোকাবিলা করতে হবে।’

অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই সময় যারা শত্রু ছিল আজকে তারা নেই। এখন নতুন শত্রু আছে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে। কলম সৈনিককে কলম দিয়ে, শিল্পীকে গান দিয়ে শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে।’  তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যেখানে দেশ ও একজন নেতা সমার্থক। আমরা সেই সৌভাগ্যবান জাতি– যেখানে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। আমাদের সৌভাগ্য বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে অনুভব করতে হবে। না হলে কেউ সুনাগরিক হতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ যে শোনেনি ও অনুভব করতে পারেনি, সে কখনও দেশের সুনাগরিক হতে পারবে না। এ ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য।’ ইউনোস্কো  এ ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের সম্মানিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন জনপ্রিয় এ লেখক। তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই ৫০ থেকে ৬০ জন ছাত্র একসঙ্গে আমার সামনে থাকে। সেখানে স্লোগান দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারি না। আজকে সুযোগ পেয়েছি, তাই স্লোগান দিচ্ছি। আপনারাও  আমার সঙ্গে স্লোগান দেন।’ এসময় তিনি ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেন। উপস্থিত সবাই তার সঙ্গে গলা মেলান।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য সেদিন আমরা খুব কাছ থেকে শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। এ ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতা ঘোষণা হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল বাঙালি নামধারী পাকিস্তানিরা। আজও তারা সক্রিয় আছে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে। ছদ্মবেশী পাকিস্তানিদের আর ক্ষমতায় যেতে দেওয়া যাবে না।’ 

শহীদজায়া শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৮ মিনিটের এ ভাষণ পড়াতে ৬টি ক্লাস নিতে হয় আমাদের। এ ভাষণ বুকে ধারণ করলে কেউ আর বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলার সাহস করবে না।’ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দেওয়ায় ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। ধন্যবাদ স্মারকটি ঢাকায় নিযুক্ত ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টরের হাতে তুলে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্মারকটি পড়েও শোনান তিনি।

এর আগে নির্মলেন্দু গুণ তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি পড়ে শোনান। শাহীন সামাদ ‘তোরা সব জয়ের ধ্বনি কর’ পরিবেশন করেন। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।