এদিকে, বিআরটিএর এমন সুপারিশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অটোরিকশার চালক ও যাত্রীরা। বিআরটিএ এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে কঠোর আন্দোলন করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
গত ১১ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইঞ্জিন ও সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য শর্তের ভিত্তিতে সিএনজি চালিত ৪-স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশার ইকোনমিক লাইফ ১৫ বছরের অতিরিক্ত কত বছর বাড়ানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। মেয়াদ বাড়ানো গেলে অটোরিকশার ইঞ্জিন ও সিলিন্ডার প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য কী কী শর্তে করা যাবে তা নির্ণয়ের জন্য বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিপোর্ট প্রদান করতে হবে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ৬-৮ সপ্তাহ সময় প্রয়োজন।
তবে বিআরটিএর এই সুপারিশ মালিকদের পক্ষে গেছে বলে অভিযোগ ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ, ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকশা-সিএনজি ড্রাইভার্স ইউনিয়ন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সচিব সাখাওয়াত হোসেন দুলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সিএনজি অটোরিকশার মেয়াদ না বাড়াতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগে স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। গত মাস থেকে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে আসছি। এসব উপেক্ষা করে বিআরটিএর চেয়ারম্যান এই গাড়িগুলোর মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। আমরা এ সুপারিশের তীব্র নিন্দা জানাই। যদি বিআরটিএ এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে তাহলে আরও কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
ঢাকা জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব প্রাণঘাতী অটোরিকশার মেয়াদ না বাড়ানো, ঢাকা মহানগরীতে চালকদের নামে বরাদ্দ করা পাঁচ হাজার অটোরিকশা বিতরণসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। এর মধ্যে বিআরটিএর এই সিদ্ধান্ত সিএনজি চালক ও যাত্রীদের হতাশ করেছে।’
এ সময় তিনি বিআরটিএর এই সুপারিশ প্রত্যাহারে দাবি জানান।
ঢাকা জেলা ফোর স্ট্রোক অটোরিকসা-সিএনজি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘গত নভেম্বর মাসে চিঠিতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বুয়েটের কাছে মেয়াদ উত্তীর্ণ অটোরিকশার মেয়াদ না বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ আমাদের দাবি পূরণ করেননি। এ বিষয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমনিতেই এই যানবাহনগুলোর অত্যাচারে অতিষ্ট সাধারণ যাত্রীরা। এরপর প্রতিটি সিএনজির সিলিন্ডার যেনো এক একটি বোমা। এই বাহনটির মেয়াদ বাড়ানো হলে যাত্রীরা মেনে নেবে না। বিআরটিএ কখনও যাত্রীদের কথা চিন্তা করে না। তারা মালিকদের স্বার্থ হাসিল করতেই এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ২০০২ সাল থেকে দেশে সিএনজি অটোরিকশা আমদানি করা হয়। প্রথমে এসব অটোরিকশার মেয়াদ ধরা হয় ৯ বছর। কিন্তু ২০১১ ও ২০১২ সালে এক বছর করে এবং ২০১৪ সালে চারসহ মোট ছয় বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় অটোরিকশাগুলোর। আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে এ যানবহনগুলোর মেয়াদ। এখন আরও ৬ মাস বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। মালিকদের দাবি, অটোরিকশাগুলোর ইঞ্জিন ও গ্যাস সিলিন্ডার পরিবর্তন করে মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করা হোক। এ জন্য বুয়েটের কাছ থেকে পরীক্ষা করে মতামত নেওয়ার পরামর্শও দেন তারা।
জানতে চাইলে বিআরটিএ পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মালিকদের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে কয়েকটি পয়েন্টের ভিত্তিতে মতামত চেয়েছে। আমরা মতামত দিয়েছি। তাছাড়া এই যানবাহনগুলোর মেয়াদ বাড়ানো যায় কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বুয়েট ৬-৮ সপ্তাহের সময় চেয়েছে। এর মধ্যে অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সার্বিক বিষয় চিন্তা করে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত জানিয়েছি। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।’