রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পাননি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা!


মুক্তিযোদ্ধা, ছবি: সংগৃহীতমহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের সংগঠিত করে যুদ্ধে পাঠানোর কাজ করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। কিন্তু যারা সংগঠক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলে দাবি করেছেন ৭ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সংগঠক ছিলাম তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা উচিত বলে মনে করি।'

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুধু সামরিক বাহিনীর লোকদের দিয়ে হয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল মূলত জনযুদ্ধ। কৃষক, শ্রমিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তারা যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয় তখন তাদের সংগঠিত করতে কাজ করেছিলেন বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যুদ্ধে পাঠানো এবং পরবর্তী দায়িত্ব নির্ধারণে সংগঠকরা কাজ করেছিলেন। জনগণের প্রতিনিধিরা যুক্ত না হলে জনযুদ্ধ সফল হয় না। বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) সংগঠিত করতে কাজ করেছি। সেসময় আমরা ছিলাম গণপরিষদের সদস্য। মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠকদের অবশ্যই রাষ্ট্রের বিশেষ সম্মান জানানো উচিত।’

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ আরও বলেন, "মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সম্মান জানানোর দাবিতে ‌‌'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সংগঠন' নামে আমরা একটি সংগঠনও করেছিলাম। যেটার সভাপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, আর সাধারণ সম্পাদক ছিলাম আমি। কিন্তু আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর এই সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধকালীন সময়ে আমরা সংগঠক ছিলাম মাত্র ১২০-১৩০ জনের মতো। সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সিরাজুল আলম খান, মোজাফফর আহমেদ, আব্দুর রহিম, খোরশেদ আমিন, দীপু সুলতান, আতাউর রহমান, জাফরউল্লাহ, আজিজুর রহমান, মতিউর রহমান, ব‌্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, আকবর রেজা, আমজাদ হোসেন প্রমুখ। এই সংগঠকদের অনেকেই বেঁচে নেই। তবে এখনও আছেন তোফায়েল আহমদ, সিরাজুল আলম খান, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামসহ অনেকেই। রাষ্ট্র চাইলে যারা এখনও বেঁচে আছেন এবং যারা মারা গেছেন তাদের তালিকা তৈরি করে সম্মাননা জানাতে পারে।" 

এ প্রসঙ্গে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়। যুদ্ধে যারা যোগ দিয়েছিলেন তাদের সবাইকে সম্মান জানানো হয়নি। বাছাই করে দেওয়া হয়েছিল। অন্য কোনও জায়গায় এদের এভাবে সম্মান জানানো হয়েছে কিনা আমার জানা নেই। তারা যে সেসময় ছিলেন, তারা যে দেশের জন্য কিছু করতে পেরেছেন, এটাই তো তাদের জন্য সম্মানের।’

আব্দুল জলিল ও আধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে সম্মান জানানোর দাবি জানানো হয়। তবে পরবর্তীতে আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর এই সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন,  ‘এতে করে বোঝা যায়, খুব বেশি সংখ্যক মানুষ তাদের সম্মানিত করা হোক সেটা চায়নি। যারা সংগঠক ছিলেন তাদের সবাইকে সম্মাননা দেওয়া যাবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। তারা মুক্তিযুদ্ধে কাজ করেছেন, এজন্য তাদের সম্মান জানানো যায়। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে গিয়ে যে ধরনের গোলমাল দেখা দিচ্ছে, এক্ষেত্রেও তেমন ঘটনা ঘটলে সেটা হবে দুঃখজনক।'

আরও পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের খবর পেয়েছিলেন যখন