এবার ক্যামেরায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

ক্যামেরা বসিয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ (ছবি- ইন্টারনেট)ক্যামেরা বসিয়ে সিগন্যালে ট্রাফিকিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সিগন্যালের কোন দিকে কত গাড়ি রয়েছে এবং সেসব গাড়ি সিগন্যাল অতিক্রম করতে কত সময় নেবে ক্যামেরাই তা নির্দেশনা দেবে। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই উদ্যোগের জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরইমধ্যে প’স ডিভাইসের মাধ্যমে ট্রাফিকে ই-প্রসিকিউশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি এই ব্যবস্থার সুফল ভোগ করছেন যানবাহন মালিক ও চালকরাও। ক্যামেরা পদ্ধতি চালু হলে রাজধানী ঢাকার যানজট অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। মানুষের হাজার হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট করছে এই ট্রাফিক জ্যাম। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছে পুলিশ। ট্রাফিক জ্যাম মোকাবিলার জন্য সারাপৃথিবীতে ব্যবহার করা হচ্ছে টেকনোলজি। রাজধানী ঢাকার অপরাধ ও ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদর দফতর ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম’ নামে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরে কর্মরত অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) গাজী মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা শহরের বড় যে দু’টি সমস্যা তার একটি হচ্ছে অপরাধ প্রবণতা। আরেকটি হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম। এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় সারাপৃথিবীতে এখন সিসিটিভি ও এ সংক্রান্ত টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক জ্যাম ও সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন চেক পয়েন্টে লং ভিশন ক্যামেরা বসানো হবে। এই ক্যামেরা একসঙ্গে ৩৬০ ডিগ্রি কাভার করতে পারবে। ক্যামেরাগুলো কন্ট্রোলরুমের মনিটরে রিয়েল টাইমের নির্দেশনা দেবে। সেটা কন্ট্রোলরুমসহ সবগুলো মনিটরিং সেন্টার থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।’
গাজী মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী গাড়িগুলোকে সঙ্গে সঙ্গে চিহ্নিত করা যাবে এই ক্যামেরার মাধ্যমে। যেমন একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেল। আমরা সেই সুনির্দিষ্ট নম্বরের গাড়িটি খুঁজছি। এ ক্ষেত্রে আমরা যদি সেই নম্বরটি প্রোগ্রামে দিয়ে রাখি যে, ওই গাড়িটি ক্যামেরার সামনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন অ্যালার্ম দেয়। ঢাকা শহরের ভেতর দিয়ে যেকোনও পথে এ গাড়িটি যখন চলাচল করবে, তখন নম্বর প্লেট চিহ্নিত হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা জানতে পারবো যে, গাড়িটি অমুক জায়গায় আছে। তখন সেটাকে ধরা যাবে।’
পুলিশ সদর দফতরে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম’ প্রজেক্টের তদারক কর্মকর্তা গাজী মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘সিগন্যাল হচ্ছে লাল বাতি জ্বলার সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট মার্জিনে দাঁড়াতে হবে। এই ক্যামেরা বসানোর পর সীমানা বা দাগ অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে সেই গাড়ির ছবি উঠবে যে, গাড়িটি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেছে। অটোমেটিক্যালি ওই গাড়ির বিরুদ্ধে কেস হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে কোনও সার্জেন্টের প্রয়োজন হবে না। এ ব্যাপারে আমরা বিআরটিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তাদের কাছ থেকে যদি ডেটাবেজ কালেক্ট করতে পারি, তাহলে বিআরটিএ’র ঠিকানা অনুযায়ী মামলার কাগজপত্র পাঠিয়ে দিতে পারবো। চেক পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী গাড়ি খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রাখা হয়েছে।’
গাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ট্রাফিক জ্যামের জন্য যে ক্যামেরা বসানো হবে, তার তৃতীয় কাজ হচ্ছে ট্রাফিকিংয়ের সময় নির্ধারণ করা। দেখা গেল, একরুটে ২০ মিনিট ধরে গাড়ি চলছে। আরেক দিকে ২০ মিনিট গাড়ি আটকে রাখা হয়েছে। এটা কিন্তু ম্যানুয়েলি কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। কোন রুটে গাড়ির লাইন কতটা আছে, সিগন্যালে দাঁড়িয়ে এখন কিন্তু তা দেখা যায় না। আমরা এখানে লং ভিশন ক্যামেরা বসাবো। তখন ক্যামেরাই বলে দেবে, কোন রুটে কতক্ষণ পর্যন্ত গাড়ি চালানো যাবে। ক্যামেরাই লজিক্যাল ভিউতে গাড়ি ছাড়ার জন্য সিগন্যাল দেবে। গাড়ির লাইন ক্লিয়ার করতে কত সময় লাগবে এবং কী পরিমাণ গাড়ি আছে, সেটাও ক্যামেরা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আধুনিক শহরগুলোতে সার্ভিলেন্স সিস্টেমে জোর দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিকের ক্ষেত্রেও আমরা এ বিষয়গুলো জোর দিচ্ছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা শহরেও আমরা আধুনিক ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম করার পরিকল্পনা নিয়েছি। আমাদের এ পরিকল্পনা যাতে স্থায়ী হয়, সেজন্য একটা ট্রেনিং সেন্টারও করা হবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘২০১২ সালে ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন ব্যবস্থা চালু করা হয়। আগে ট্রাফিক সার্জেন্টরা ম্যানুয়েলি রশিদ দিয়ে মামলা করতেন। এখন ‘প’স মেশিন দিয়ে মামলা করা হয়। আগে যখন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য মামলা করা হতো, তখন মানুষজনকে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট ট্রাফিক অফিসে হাজিরার জন্য নোটিশ দেওয়া হতো। তখন একজন ব্যক্তিকে অনেক দূর থেকে ট্রাফিক অফিসে এসে টাকা জমা দিতে হতো। এতে ওই ব্যক্তি অনেক ভোগান্তিতে পড়তেন। ট্রাফিক অফিসে গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, অনেক দূর থেকে আসতে গিয়ে সময় নষ্ট হতো। যেমন উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে যেমন সময় ব্যয় হতো, তেমনি অর্থও ব্যয় হতো। সেজন্য এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। সার্জেন্টদেরকে বইয়ের পরিবর্তে আমরা ‘প’স ডিভাইস দিয়েছি। এই ‘প’স ডিভাইসের মাধ্যমে এখন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার পর একটি স্লিপ দেওয়া হয় ডিভাইস থেকে। এই স্লিপ নিয়ে ক্রেডিট কার্ড কিংবা মোবাইলের মাধ্যমে জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে পারেন। ব্যাংকেও পরিশোধ করা যায়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অনেকগুলো পথ সৃষ্টি করা। যাতে যে কেউ দ্রুত টাকা জমা দিয়ে তার কাগজপত্র বুঝে নিতে পারেন। এর কারণে পুলিশ ও সাধারণ মানুষ সবাই ভালো ফল পাচ্ছি।’’
মাসুদুর রহমান আরও বলেন, ‘‘এই ‘প’স ডিভাইসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ ডিভাইসের মাধ্যমে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, চেসিস ও ইঞ্জিন নম্বর, গাড়ির ট্যাক্স টোকেন সংক্রান্ত তথ্য যাচাই, গাড়ির রুট পারমিট ও মামলার তথ্য যাচাই করা সহজ হয়। বিআরটিএ-এর সঙ্গে পুলিশের সফটওয়্যার কানেকটিভিটি রয়েছে। প’স ডিভাইসের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে মুহূর্তে এসব তথ্য জানা যায়।