যে প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

 

বঙ্গভবন (ছবি-ইন্টারনেট থেকে)দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ফলে এই নির্বাচন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংসদ ভবনে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে, রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে বিধান অনুযায়ী ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।

দেশের সংবিধানের বিধান অনুযায়ী প্রণীত ১৯৯১ সালের আইন ও বিধিমালার আলোকে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়াদ পূর্ণ ও মৃত্যু কিংবা পদত্যাগ ও অপসারণের কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়ে থাকে। এর আগে প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত  হলেও ১৯৯১ সালের ২ জুলাই  সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ-সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। 

সংবিধান অনুযায়ী ৩৫ বছর তা তারও বেশি বসয়ী এবং সংসদ সদস্য নির্বাচনের যোগ্য যেকোনও ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে, তার মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে সংসদ সদস্য থাকতে হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময়ও তার সঙ্গে একজন সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ‘নির্বাচনি কর্তা’ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করেন।রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হলে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিডিউল ঘোষণা করেন। নির্বাচনি সিডিউল ঘোষণার আগে কমিশন সংসদ সদস্যদের বিভক্তি সংখ্যা (সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত বিভক্তি সংখ্যা), নাম ও নির্বাচনি এলাকা উল্লেখ করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে।

সংসদ অধিবেশনের সময় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সময়ে যদি অধিবেশন না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভোটগ্রহণের কমপক্ষে সাতদিন আগে অধিবেশন আহ্বান করবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ের মতো রাষ্ট্রপতিকে অধিবেশন ডাকতে হবে না।

নির্বাচনি কর্মকর্তা (নির্বাচন কমিশন) ভোটগ্রহণের দিনের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন। সংসদে স্পিকার সংসদ অধিবেশন চলার সময় শৃঙ্খলার স্বার্থে যে ব্যবস্থা নেবেন, ভোটের দিন নির্বাচনি কর্মকর্তা সেই ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী হবেন। যেকোনও ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ তাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিনে  নির্বাচন ছাড়া সংসদের অন্য কোনও কার্যক্রম চলতে পারবে না। নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচনি কর্মকর্তা নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার পর সংসদ কক্ষে প্রার্থীদের প্রস্তাবক ও সমর্থকের নাম ঘোষণা করবেন।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনি কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর  মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদ কক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে।

প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এই নির্বাচনে একজন ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনি কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। 

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েঠে। এরমধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আর ওই সময়ে  বিরোধী দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রত্যেক বার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এর কোনও ক্ষেত্রেই সংসদ কক্ষে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কমিশন গেজেটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।

সংবিধানে যা বলা হয়েছে

সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্য কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন।কারও বয়স ৩৫ বছরের কম ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য না হলে কেউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না। 

রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কার্যভার গ্রহণের সময় থেকে ৫ বছর। তবে, মেয়াদ শেষ হলেও তার পরবর্তী রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। একাদিক্রমে হোক না না হোক দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন না।’

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান রয়েছে। এতে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। তবে, যে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে, ওই সংসদের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না। এবং সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে শূন্য হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।