এক নজরে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পকক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে বিদ্যুতের হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এজন্য শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়,  পুরো এলাকাটিকেই একটি আধুনিক শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) ১০ মেগা প্রকল্পের একটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এর অধীনে নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে গত বছরের জুলাইয়ে জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি করে সিপিজিসিবিএল। জাপানি কনসোর্টিয়ামের অন্যতম কোম্পানি তোশিবা করপোরেশন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

মাতারবাড়ী ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের এক হাজার ৪১৪ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে।

সিপিজিসিবিএল সূত্র জানায়, প্রকল্পে ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন স্থাপন, ২৭৫ মিটার উচ্চতার চিমনি ও পানি শোধন ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।

কয়লা আমদানির জন্য নদীতে ৭ কিলোমিটার নৌ চ্যানেল করা হবে। পাশাপাশি কয়লা ওঠানামার জন্য নির্মাণ করা হবে জেটি।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

কয়লা আমদানির পর তা সংরক্ষণের জন্য বানানো হবে কোল ইয়ার্ড। পাশাপাশি টাউনশিপ নির্মাণ, গ্রাম বিদ্যুতায়ন এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন কাজের আওতায় চকোরিয়া-মাতারবাড়ী ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ ও ১৩২/৩৩ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সাবস্টেশন নির্মাণ করা হবে।

পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। নির্মাণ করা হবে অ্যাশ ডিসপোজাল এরিয়া এবং বাফার জোন।

পরিবেশ দূষণ রোধে অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৭০০ কেজি স্ট্যান্ডার্ডে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কয়লা আমদানি করা হবে। এতে প্রতি টন কয়লার দাম প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ২৫৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরা হয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তির এই কেন্দ্রে কম পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে এবং কম কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে। ফলে বায়ুদূষণসহ পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব একেবারেই কম পড়বে। এছাড়া নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ রোধ করার জন্য লোরেট বার্নার স্থাপন করা হবে। সালফার-ডাই অক্সাইড রোধ করার জন্য সাগরের পানিতে ডি-সালফারাইজেশন মেথড ব্যবহার করা হবে। অ্যাশ রোধ বা কমানোর জন্য ইলেকট্রোস্টেটিক প্রিসিপিটেটর এ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সাব-বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করা হবে।মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

এছাড়া এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আনার জন্য একটি বন্দর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যা দেশের আধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবেও গড়ে তোলা হবে। ৫৯ ফুট গভীর এ বন্দরে ৮০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে। জাপানের তোশিবা করপোরেশন এ বন্দরটি নির্মাণ করবে।

অর্থায়ন

২০১৫ সালের আগস্টে মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এই প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা-জাইকা। বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট অর্থের যোগান দেবে কেন্দ্রটির বাস্তবায়নকারী ও স্বত্বাধিকারী সিপিজিসিবিএল।

বর্তমান কাজের অগ্রগতি

প্রকল্প এলাকায় সড়ক নির্মাণ, টাউনশিপ গড়ে তোলাসহ আনুষঙ্গিক কাজের প্রায় ১৭ শতাংশ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে বর্তমানে ৪০০ শ্রমিক কাজ করছেন। পর্যায়ক্রমে আরও দুই হাজার শ্রমিক এ প্রকল্পে যোগ দেবে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এছাড়া মাতারবাড়িতে আরও তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর। গতবছর এই দুই দেশের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এদিকে এলএনজি আমদানির জন্য এলএনজি টার্মিনাল করারও পরিকল্পনা আছে সরকারের।